All news

কেরানীগঞ্জকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বসুন্ধরা গ্রুপের ১০ কোটি টাকার অনুদান

কেরানীগঞ্জকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বসুন্ধরা গ্রুপের ১০ কোটি টাকার অনুদান

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পাঁচটি ইউনিয়নকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এ কাজে ব্যবহৃত হবে ২০০ সিসি ক্যামেরা। গতকাল বিকালে কেরানীগঞ্জের সেমন্তী কনভেনশন হলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ঢাকা জেলা পুলিশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পৃষ্ঠপোষকতা করছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের পক্ষে তাঁর সচিব ও বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাকসুদুর রহমান ১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন। চেক গ্রহণ করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বক্তব্যের শুরুতে তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পৃষ্ঠপোষকতাকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা গ্রুপকে আমরা পাশে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পুলিশ বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কেরানীগঞ্জের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ তারই অংশ। পুলিশ বাহিনী নিজের জীবন বিপন্ন করে ২৪ ঘণ্টা মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত শান্তি সমাবেশের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, সেখানেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মাহুতি দিয়েছেন। নসরুল হামিদ বিপু বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা জোরদারের পথ আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ ধরনের উন্নত সিসি ক্যামেরা দেশের আধুনিক এলাকা ছাড়া আর কোথাও নেই। প্রতিটি অলি-গলিতে আমরা ক্যামেরা স্থাপন করব। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা কেরানীগঞ্জকে শতভাগ অপরাধমুক্ত ঘোষণা করব ইনশা আল্লাহ।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন।
এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ ও ঢাকা জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজামান। অনুষ্ঠানে উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সুফল কেরানীগঞ্জের মানুষ নানাভাবে পাবে। একসময় গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত সড়কে চলত ব্যাপক ডাকাতি, হত্যা। আমি প্রায় ৬৫ কিলোমিটারজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দিয়েছিলাম। এরপর ডাকাতি, অতিরিক্ত গতিতে গাড়িচালনা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। সিসি ক্যামেরা থাকলে যে কোনো অপরাধী অপরাধ করার আগে চিন্তাভাবনা করবে। এ কাজে এগিয়ে এসে বসুন্ধরা গ্রুপ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা জোরদারে বড় অবদান রাখল। সবাই ঘুমিয়ে যাবে, এই সিসি ক্যামেরাগুলো রাত জেগে পাহারা দেবে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, একটি সিসি ক্যামেরা একটি চোখ। অনেক চোখ, যা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কেরানীগঞ্জের মানুষকে নিরাপত্তা দেবে। এটি কেরানীগঞ্জবাসীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায় তিনি কেরানীগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তার বিশ্বাস, এতে কেরানীগঞ্জের ৯৯ শতাংশ অপরাধ দমন হবে। জানা গেছে, এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কেরানীগঞ্জের প্রায় অর্ধেক এলাকা নজরদারির আওতায় আসবে। কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবির অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, কেরানীগঞ্জ একটি উন্নয়নশীল এলাকা। আবাসনের পাশাপাশি এখানে প্রচুর শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকায় ভাসমান লোকের সংখ্যা বেশি। ব্যবসায়ী এলাকা হওয়ায় ছিনতাই, চুরি এবং ডাকাতির ঘটনাও প্রায়শই ঘটে। তাই এই পুরো এলাকাকে নিরাপদ রাখতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিষয়টি স্থানীয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে জানালে তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর এগিয়ে আসে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় এই পরিকল্পনা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার) বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, বসুন্ধরা গ্রুপ আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে, আমরা বাস্তবায়ন করছি। কিন্তু এই সিসি ক্যামেরাগুলো হবে কেরানীগঞ্জবাসীর সম্পদ।

SOURCE : বাংলাদেশ প্রতিদিন