All news

'কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা' প্রতিযোগিতার সমাপনী

'কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা' প্রতিযোগিতার সমাপনী

দেশের ইতিহাসের বৃহৎ হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা 'কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা' প্রথম আসরের সমাপনী ও ইসলামিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের নগদ অর্থ ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে আইসিসিবির নবরাত্রি হলে বিশ্ববরেণ্য সম্মানিত আলেম-ওলামাগণের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এই প্রতিযোগিতায় প্রায় ১০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত ধাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ঢাকা উত্তরের মারকাজুল ফয়জুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষার্থী হাফেজ নুরুদ্দীন মোহাম্মদ জাকারিয়া।

পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় বিজয়ী ঢাকা উত্তরের মো. শাহরিয়ার নাফিস সালমান পেয়েছেন ৭ লাখ টাকা। তৃতীয় কুমিল্লার শামসুল উলূম তাহফিজুল হিফজ কোরআন মাদরাসার মো. মোশাররফ হোসাইন পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা। চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মারকাজুত তাহফিজ মাদরাসার দুই শিক্ষার্থী মো. নাসরুল্লাহ আনাছ এবং মোহাম্মদ বশীর আহমদ। পুরস্কার হিসেবে তারা পেয়েছেন দুই লাখ টাকা করে।

সেরা আটের বাকি তিনজন ময়মনসিংহের মো. লাবিব আল হাসান, সিলেটের মো. আবু তালহা আনহার ও ঢাকা দক্ষিণের আবদুল্লাহ আল মারুফ পেয়েছেন ১ লাখ টাকা করে।

এ ছাড়া বিজয়ীদের বিশেষ সম্মাননা ও সনদপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে পিতা-মাতাসহ পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এদিকে, প্রতিযোগিতার ৯ম থেকে ৪৫তম স্থান অধিকারীরাও পেয়েছেন আর্থিক সম্মাননা। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির এই অনন্য আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজটোয়েন্টিফোর চ্যানেলে হাফেজদের এ প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, এটা সত্যি গর্বের ব্যাপার যে ইসলাম কত সুন্দর কত শান্ত কত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে। তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ আজকের এই আয়োজন। এই আয়োজন আগামীতে যেন নিয়মিতভাবে চালু থাকে তার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ সচেষ্ট থাকবে। আর পুরস্কারের মাত্রা সাতজনের জায়গায় অন্তত ১৫ জন হওয়া উচিত। কেননা, প্রতি জেলা থেকে এত সংখ্যক প্রতিযোগী আসে, আমি চাই না তারা বিরাগভাজন হয়ে ফিরুক। এই শিশুরা তাদের আত্মার ভেতরে কুরআনকে ঢুকিয়ে রেখেছেন। এরাই ভবিষ্যতে কুরআনকে রক্ষা করবে। আমি অনুরোধ করবো যারা হাফেজ, তারা শুধু আরবিতে নয় বাংলাতেও কুরআনের অর্থ বুঝে পারদর্শী হয়ে উঠবে।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমার ইচ্ছা, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বাইতুল মুকাররমের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আহ্বান জানাই। যেখানে এই হাফেজসহ ও আরো অনেকে উচ্চশিক্ষা পাবে এবং সারা বিশ্বে ইসলামের মুখ উজ্জ্বল করবে। এটা প্রমাণ করবে যে বাঙালি মুসলমান অনেক শক্তিশালী, ইসলামে তাদের খুঁটি অনেক শক্ত। সুতরাং আপনারা সবাই দোয়া করবেন যেন একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বসুন্ধরা স্থাপন করতে পারে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি জায়গা দান করারও ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানি (রহ.) এর সুযোগ্য নাতি আওলাদে রাসুল (সা.) সায়্যিদ মুফতি আফফান মানসুরপুরী (হাফিজাহুল্লাহ)। তিনি ভারত থেকে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, এই ধরনের আয়োজন সত্যিই অনন্য। আগামীতেও এই আয়োজন আরো বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে- এটাই প্রত্যাশা করি। কুরআনের সেবা করা মানেই ইসলামের সেবা করা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমি আশা করি এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের কোরআনের হেফাজতগন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মান আরো উঁচুতে নিয়ে যাবে। তারা নিজেরা নতুন নতুন সাফল্য অর্জন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ইসলাম মানে শান্তি, ইসলাম মানে মানবতা। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো কুরআনের বাণীকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আগামীতে কুরআনের এই প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে আয়োজন করা হবে। আপনারা সকলে দোয়া করবেন যেন আমরা সফলভাবে এই আয়োজন করতে পারি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সুদূর মিশর থেকে আসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কারি শায়খ ড. আহমাদ আহমাদ নাইনা (হাফিজাহুল্লাহ)। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া (দা.বা.), জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির এই অনন্য আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাজধানীর ১ হাজার মসজিদের প্রখ্যাত ইমাম, মুহতামিম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও ইসলামিক স্কলারগণ উপস্থিত ছিলেন। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, থানা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন ১৫০ জন আলেম ও ইসলামিক স্কলার। গত কয়েকদিন ধরে বিপুল সংখ্যক ইসলামিক স্কলার ও আলেমকে একত্রিত করার এ বড় কর্মযজ্ঞ চলে সরাসরি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তত্ত্বাবধানে।

SOURCE : Protidiner Sangbad