All news

চ্যাম্পিয়ন জাকারিয়া রানারআপ সালমান

চ্যাম্পিয়ন জাকারিয়া রানারআপ সালমান

বসুন্ধরা গ্রুপের আয়োজনে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ও ইসলামিক কনফারেন্সের সমাপনী দেশের ইতিহাসের বৃহৎ হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’ প্রথম আসরের সমাপনী ও ইসলামিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি-বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের নগদ অর্থ ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে আইসিসিবির নবরাত্রি হলে বিশ্ববরেণ্য সম্মানিত আলেম-ওলামাদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় ১০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত ধাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন ঢাকা উত্তরের মারকাজুল ফয়জুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষার্থী হাফেজ নুরুদ্দীন মোহাম্মদ জাকারিয়া। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় বিজয়ী ঢাকা উত্তরের মো. শাহরিয়ার নাফিস সালমান পেয়েছেন ৭ লাখ টাকা। তৃতীয় কুমিল্লার শামসুল উলূম তাহফিজুল হিফজ কোরআন মাদরাসার মো. মোশাররফ হোসাইন পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা। চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মারকাজুত তাহফিজ মাদরাসার দুই শিক্ষার্থী মো. নাসরুল্লাহ আনাছ ও মোহাম্মদ বশীর আহমদ। পুরস্কার হিসেবে তারা পেয়েছেন ২ লাখ টাকা করে। সেরা আটের বাকি তিনজন ময়মনসিংহের মো. লাবিব আল হাসান, সিলেটের মো. আবু তালহা আনহার ও ঢাকা দক্ষিণের আবদুল্লাহ আল মারুফ পেয়েছেন ১ লাখ টাকা করে। এ ছাড়া বিজয়ীদের বিশেষ সম্মাননা ও সনদপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে পিতা-মাতাসহ পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এদিকে প্রতিযোগিতার নবম থেকে ৪৫তম স্থান অধিকারীরাও পেয়েছেন আর্থিক সম্মাননা। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির এই অনন্য আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে হাফেজদের এ প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হয়।

কুরআনের নূর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হাফেজ নুরুদ্দীন মোহাম্মদ জাকারিয়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। রানারআপ হাফেজ শাহরিয়ার নাফিজ সালমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শনিবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এরপর বক্তব্য প্রদানের সময় তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে আমি বিনামূল্যে জমি দান করব। আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অনুরোধ করব, তিনি যাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামের খুঁটি যে অনেক শক্ত, তা আমরা সমগ্র বিশ্বকে দেখাতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে বসুন্ধরা এটি করতে পারে।’

খুদে হাফেজদের মধুর কণ্ঠে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাফেজদের কণ্ঠ যাতে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, বসুন্ধরা গ্রুপ সে উদ্যোগ নেবে। এ আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে প্রতি বছর ৯ ফেব্রুয়ারি যাতে এটি শুরু হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে। এ ধরনের সুন্দর আয়োজনের জন্য তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।

পুরস্কারের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ প্রতিযোগিতায় অন্তত ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা উচিত। কেননা দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে ছোট ছোট প্রতিযোগীরা যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, সেভাবে তাদের উৎসাহিত করা দরকার। প্রতি জেলা থেকে যেভাবে প্রতিযোগীরা আসে, আমি চাই না তারা বিরাগভাজন হয়ে ফিরে যায়।

খুদে হাফেজদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নতি কামনা করে তিনি বলেন, ‘স্বনামধন্য আলেমরা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। হাফেজরা যাতে বাংলায়ও পবিত্র কুরআনকে বুঝতে পারেন, তারা যাতে ভবিষ্যতে আরও অনেক উঁচু স্থানে চলে যেতে পারেন, সে কামনা করি। কারণ এই হাফেজরাই তাদের বুকের ভিতর পবিত্র কুরআনকে সংরক্ষণ করবেন।’ অনুষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলাম কত সুন্দর, কত শান্ত, কত নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আজকের এ অনুষ্ঠান। এত সুন্দর আয়োজন আমি আমার জীবনে দেখিনি। কোনো হইচই নেই। সবাই নির্বিঘ্ন নয়নে চেয়ে আছে। এত সুন্দর সুন্দর তিলাওয়াত শুনে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৫ বিঘা জমিতে মক্কা-মদিনার আদলে একটি কবরস্থান করছি। আপনাদের সবার দোয়া এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা ইসলামের খেদমতে এ ধরনের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানি (রহ.)-এর সুযোগ্য নাতি আওলাদে রসুল (সা.) সায়্যিদ মুফতি আফফান মানসুরপুরী (হাফিজাহুল্লাহ)। তিনি ভারত থেকে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কুরআনের প্রতি বসুন্ধরা গ্রুপের যে মুহব্বত আমরা দেখতে পাচ্ছি, আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন। খাদেমে কুরআন হওয়া আল্লাহর অশেষ রহমত। বসুন্ধরা গ্রুপকে আল্লাহ সেই তৌফিক দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁদের এ ধরনের সব প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। তিনি বলেন, সৌদি, দুবাইয়ের মতো বাংলাদেশেও কুরআনের হাফেজদের নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এর কারণ হলো বসুন্ধরা গ্রুপের মতো খাদেমে কুরআন এ দেশে রয়েছে। কুরআনের পথে অর্থ ব্যয়ের সৌভাগ্য সবার হয় না। আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন, তাকেই এ সৌভাগ্য দিয়ে থাকেন। আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি আমাদের কুরআনের এ অনুষ্ঠানে আসার তৌফিক দিয়েছেন। এজন্য আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহ যেন আমাদের জীবনের শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত কুরআনের আলোকে জীবন ধারণের তৌফিক দেন। যারা বিজয়ী হয়েছেন, যারা অংশগ্রহণ করেছেন আল্লাহ তাদের কুরআন-সমৃদ্ধ জীবন দান করুন।

হাফেজদের উৎসাহ জানিয়ে তিনি বলেন, যে কণ্ঠে আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত হবে সেই কণ্ঠকে আমাদের চুমু দেওয়া উচিত। কুরআনের নূর এবং আল্লাহর কালামে বড় বড় পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। সেই কালাম খুদে হাফেজদের গলায় শোভা পাচ্ছে। আল্লাহ যেন আমাদের ইসলামের পথে চলার তৌফিক দান করেন। তিনি আরও বলেন, ইজ্জত চাইলে, নাজাত চাইলে ও সফলতা চাইলে পবিত্র কুরআনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কুরআন থেকে দূরে গিয়ে ইজ্জত পাওয়া যাবে না। সফলতা পাওয়া যাবে না। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। ইসলামের আদর্শ এবং পবিত্র কুরআনের বাণী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।

হিফজুল কুরআনের এ প্রতিযোগিতাকে আগামীতে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আগামীতে কুরআনের এ প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশেই আয়োজন করা হবে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাফেজরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন হাফিজুল্লাহ বলেন, আল্লাহর কালাম উপলক্ষে আলেম- ওলামাদের এ মিলনমেলা। কুরআনকে আমাদের অন্তরের গভীরে স্থান দেওয়া দরকার। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। কুরআনকে যারা মর্যাদা দিয়েছেন আল্লাহ যেন তাদের কেয়ামতের দিন ওলামায়ে কেরামের ছায়ায় ও তাদের সঙ্গে আল্লাহর আরশের আশপাশে জায়গায় রাখেন। যারা এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাদের যেন আল্লাহ কুরআনের নূর দিয়ে আলোকিত করে দেন। আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, আল্লাহ আমাদের, আমাদের বাচ্চাদের ও অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সেই তৌফিক দান করুন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী বলেন, এ প্রতিযোগিতার বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে জানালে তিনি পরিধি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘পবিত্র কুরআনের হাফেজদের নিয়ে অনুষ্ঠান দেশব্যাপী হবে। আপনারা সব বিভাগীয় শহরে যান। এটা করা হলে সারা দেশের মানুষ দেখবে, কুরআনের হাফেজদের মূল্যায়ন করা হয়। এতে কুরআনের হাফেজদের ও কুরআনের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়বে। সবাই পবিত্র কুরআন পড়তে আগ্রহী হবে।’ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানটি আমরা রমজানে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সায়েম সোবহান আনভীর সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বড় বড় অনুষ্ঠান হয়। আর পবিত্র কুরআনের হাফেজদের নিয়ে সম্মাননা অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে হবে এটা কোনোভাবেই হতে পারে না।’ তাঁর সেই পরামর্শে আমরা আজকে এত বড় আয়োজন করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরা গ্রপের এমডি ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ সেন্টার স্থাপনের জন্য জায়গা দিয়েছেন। গত বছর সামর্থ্যহীন প্রায় ১৩০ জন গরিব ইমানদার মানুষকে ওমরাহ হজ করিয়েছেন। উনি সব সময় ইসলামের খেদমত ও কুরআনের সম্মানের রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। গরিব-সামর্থ্যহীনেরা যাতে কুরআনের হাফেজ হতে পারেন, এজন্য কুরআনের শিক্ষায় একটি ট্রাস্ট করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ভালো কাজকে উৎসাহ দিতে হয়। আমাদের রসুল (সা.)ও বিভিন্ন ব্যক্তির ভালো কাজের প্রশংসা করতেন। তিনি হজরত ওমর, আবুবকরের বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করতেন। আপনি যদি কারও ভালো কাজের প্রশংসা না করেন, তাহলে মানুষ ভালো কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। হাফেজদের পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কুরআনকে যারা সম্মানিত করেছেন আল্লাহ তাদের সম্মানিত করুক, বলে মন্তব্য করেছেন জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ। তিনি বলেন, কুরআনের হাফেজদের নিয়ে এত বড় আয়োজন করায় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, পুরস্কার বিতরণ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। আনন্দিত হওয়ার কারণ হলো এখানে কুরআনে হাফেজদের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আল্লামা শেখ আহমদ বলেন, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বসুন্ধারা গ্রুপ ও বায়তুল মোকাররমের মুসল্লি কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। এ ছাড়া যাদের পরিশ্রমের কারণে অনুষ্ঠান সফল হয়েছে তাদেরও ধন্যবাদ। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাজি মো. ইয়াকুব আলী বলেন, কুরআনের সংস্করণ ও খুদে হাফেজদের জন্য এমন আয়োজন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। এমন আয়োজন এটাই প্রথম; যা ইসলামের প্রতি বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা ছিল জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির। কিন্তু অর্থাভাবে তা করা যাচ্ছিল না। পরিকল্পনার কথা বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর সাহেবকে জানাই। তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। খুদে হাফেজদের সম্মাননার পাশাপাশি তাদের পিতা-মাতাকেও হজের সুযোগ দেওয়া হবে। সবশেষে তিনি বসুন্ধারা গ্রুপের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে আইসিসিবির নবরাত্রি হল হয়ে ওঠে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ইসলামী স্কলার, আলেমের মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সুদূর মিসর থেকে আসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কারি শায়খ ড. আহমাদ আহমাদ নাইনা (হাফিজাহুল্লাহ)। তিনি মনোমুগ্ধকর কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানস্থলকে বিমোহিত করে তোলেন। এর আগে বিশ্বজয়ী হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিমের সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর ইসলামের কল্যাণে বসুন্ধরা গ্রুপ- এ শিরোনামে অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহহিয়া (দা বা) অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববরেণ্য কারি, বাংলাদেশের শায়খুল কুররা, শৈল্পিক তিলাওয়াতের রূপকার শায়খ আহমদ বিন ইউসুফ আযহারী (হাফিজাহুল্লাহ)-ও কুরআন তিলাওয়াত করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে রাজধানীর ১ হাজার মসজিদের প্রখ্যাত ইমাম, মুহতামিম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও ইসলামিক স্কলারগণ উপস্থিত ছিলেন। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন ১৫০ জন আলেম ও ইসলামিক স্কলার। কয়েক দিন ধরে বিপুলসংখ্যক ইসলামিক স্কলার ও আলেমকে একত্র করার এ বড় কর্মযজ্ঞ চলে সরাসরি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তত্ত্বাবধানে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ আয়োজন দেশি-বিদেশি সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে পৌঁছাতে ৫০টির বেশি গণমাধ্যম, জনপ্রিয় ইসলামিক ফেসবুক ও ইউটিউব পেজ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। গত ১ ফেব্রুয়ারি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ রিয়েলিটি শো আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল। এরপর অভাবনীয় সাড়া জাগে। সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারো মাদরাসা থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিলেন ১০ হাজারের বেশি হাফেজ। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধিত হাফেজদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠত্ব বাছাইয়ে নেওয়া হয় নিখুঁত পরিকল্পনা। এর সঙ্গে যুক্ত হন দেশের নামজাদা ইসলামিক স্কলাররা। নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেন বিভিন্ন মাদরাসার মুহতামিম, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি।

SOURCE : বাংলাদেশ প্রতিদিন