স্বর্ণ চোরাচালান রুখতে দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এটি সম্ভব হলে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। দেশে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ কারিগর রয়েছেন। বর্তমানে ২৫ হাজার স্বর্ণের দোকান এবং এই খাতে যুক্ত রয়েছেন ৪৪ লাখ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিকনির্দেশনা এবং ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরে অন্তত দুই কোটি মানুষ এই খাতের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি ও দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে মনে করেন বাজুস সভাপতি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ বাংলাদেশ আজ তরতর করে উন্নত দেশের কাতারে উঠে যাচ্ছে। অবহেলিত এই স্বর্ণশিল্পের গতি ফেরাতে আমাদের আইকনিক প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনা এবং ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা খুবই জরুরি।
স্বর্ণ পরিশোধন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাজুস সভাপতি বলেন, শুধু আমদানি নয়, এখন সময় হয়েছে সোনা রপ্তানি করার। এজন্য জুয়েলারি কারখানা করতে হবে। আমাদের অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জুয়েলারি শ্রমিক হিসেবে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছেন। এখন দেশে যদি এ ধরনের কারখানা হয়, তাহলে তারা দেশের কারখানায় কাজ করবেন এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বর্ণ চোরাচালান থামানো যায়নি। তথ্য বলছে, সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বর্তমানে দেশে ৯০ ভাগ স্বর্ণ আসছে চোরাইপথে। এতে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু দেশে স্বর্ণ পরিশোধন কারখানা গড়ে উঠলে এই শিল্প থেকে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। একই সঙ্গে কারিগর থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবেন।
বাজুস সভাপতি বলেন, সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে এ খাতের ব্যবসায়ীরা কিছুটা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক পথে ব্যবসা করতে চাওয়া স্বর্ণব্যবসায়ীরা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। শুধু তাই নয়, চোরাচালান থামানো, সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি থেকে বাঁচানো এবং দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশেই জুয়েলারি ইন্ড্রাস্ট্রি তৈরি করতে হবে। এটা তৈরি হলে চোরাকারবারি বন্ধ হবে, দেশের টাকা পাচার বন্ধ হবে। বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের পাশপাশি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি বিদেশে রপ্তানি হবে। আর এই ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে হলে ব্যংকিং খাতের সহায়তা ছাড়া এটা করা খুবই কঠিন কাজ। স্বর্ণশিল্প বিকাশে বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতা খুবই দরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে, যা দিয়ে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব।
কাঁচামাল পরিশোধন করে স্বর্ণ উৎপাদনে যুগে প্রবেশ করা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই যুগান্তকারী অর্জন। ওই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি শতভাগ রফতানিমুখী স্বর্ণ ও গহনা শিল্পের স্বনির্ভরতা দেখাতে পারবে—এ প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত প্রতিবছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জুয়েলারি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। যা সেদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে। বাংলাদেশেও সেটি সম্ভব। কারণ বাংলাদেশে যে ধরনের দক্ষ কারিগর আছে, তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরল।
এ সময় বাজুস সভাপতি বলেন, আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, অনেক দক্ষ কারিগরের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশে কাজের ভালো সুযোগ পরিবেশ না পেয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে অনেকে সেখানে কাজ করে বিশ্বমানের অলংকার তৈরি করছে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের অনেক কারিগর বাংলাদেশ থেকে গিয়ে কাজ করছেন ভারত ও দুবাইয়ে। যদি দেশে এই শিল্প তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশীয় কারিগরদের সুদিন ফিরবে। পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করা স্বর্ণশিল্পীরা দেশে এসে কাজ করতে পারবেন। স্বর্ণশিল্পের দক্ষ কারিগররা এখন কাজ না পেয়ে অনেকেই পূর্বসূরীদের এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পের সবচেয়ে বড় অপবাদ হলো পাইকারি পর্যায়ে স্বর্ণ কেনাবেচায় বৈধ কাগজপত্র বিনিময় হয় না। অর্থাৎ কেনাবেচার পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ। স্বর্ণ পরিশোধন ও উৎপাদনের যাওয়ার মাধ্যমে কি এই শিল্পের অপবাদ ঘুচবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, অবশ্যই আমরা এই ধরনের অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। সে কারণেই দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উনার সহযোগিতা পেলে জুয়েলারি শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে পারবো আমরা। তখন আর চোরাইপথে স্বর্ণ দেশে আসতে হবে না, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ রপ্তানি করতে পারবো।
স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা উচিত। কারণ, বাজুস হলো এই শিল্পের মূল অংশীজন আর বাংলাদেশ ব্যাংক হলো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। তাহলে গ্রাহক এবং ব্যবসায়ী দুপক্ষই লাভবান হবেন। ঠিক কবে নাগাদ স্বর্ণ পরিশোধন এর কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাঁচামাল হলেই জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ তৈরিতে এই শিল্প ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে রপ্তানিখাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জুয়েলারি শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
গোল্ড ব্যাংক প্রসঙ্গেও কথা বলেন বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে সোনা বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নেওয়া যেত। কিন্তু এখন সেই নিয়মটি আর নেই। এটা চালু করা জরুরি। এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি নীতিমালা দরকার, যার আওতায় বাজুসের মাধ্যমে দেশে গোল্ড ব্যাংক এবং গোল্ড এক্সচেঞ্জ করা সম্ভব। গোল্ড এক্সচেঞ্জে প্রতিদিনের মূল্য নির্ধারণ হবে। এটা হলে সোনা চোরাচালান, পাচারের যেসব কথা শোনা যায়, তা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এতে ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, চোরাচালান বন্ধ করে দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরিতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
SOURCE : আমাদের সময়কসবায় বসুন্ধরার সহায়তায় চক্ষু চিকিৎসা পেল ৫০০ রোগী
500 Patients Receive Eye Treatment in Kasba with Bashundhara Group’s Support
৬০ জন দরিদ্র মহিলাকে সেলাই মেশিন দান করলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Donates Sewing Machines to 60 Poor Women in Bancharampur
বসুন্ধরা গ্রুপ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখছে
Bashundhara Group Keeps Underprivileged Students' Dreams Alive
শায়েস্তাগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
Bashundhara Shuvosangho Distributed Food Items Among Underprivileged People in Shayestaganj
আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’ আসরের সমাপনী
"Qur'an-er Noor - Powered by Bashundhara" Int'l Hifzul Qur'an Competition Closing Ceremony is Held