All news

প্রধানমন্ত্রীর সুনজর পেলে জুয়েলারিশিল্প বদলে যাবে বদলাবে অর্থনীতিও

প্রধানমন্ত্রীর সুনজর পেলে জুয়েলারিশিল্প বদলে যাবে বদলাবে অর্থনীতিও- বাজুস প্রেসিডেন্ট

স্বর্ণ চোরাচালান রুখতে দেশে জুয়েলারিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এটি করা গেলে জুয়েলারি রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে। তবে এর জন্য সরকারের নীতি সহায়তা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা ও ব্যাংক খাতের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর গতকাল শনিবার এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

তিনি দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের স্বর্ণের কারিগর আছেন। সারা দেশে ২৫ হাজারের মতো স্বর্ণের দোকান আছে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত আছে কয়েক লাখ মানুষ।

জুয়েলারিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা হলে আগামী পাঁচ বছরে আরো কয়েক লাখ লোক এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হবে। 

বাজুস সভাপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জুয়েলারিশিল্প প্রতিষ্ঠা করে এই অগ্রযাত্রাকে আরো ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে মনে করি।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

তাই তাঁর দূরদর্শী চিন্তা ও দিকনির্দেশনা যুক্ত হলে অবহেলিত এই স্বর্ণশিল্প গতি পাবে।

স্বর্ণ পরিশোধন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাজুস সভাপতি বলেন, ‘শুধু আমদানি নয়, এখন সময় হয়েছে সোনা রপ্তানি করার। এ জন্য জুয়েলারি কারখানা করতে হবে। আমাদের অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জুয়েলারি শ্রমিক হিসেবে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে যদি এ ধরনের কারখানা হয়, তাহলে তাঁরা দেশের কারখানায় কাজ করবেন এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে।

তবে এর জন্য ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন দেশে স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বর্তমানে দেশে ৯০ শতাংশ স্বর্ণ আসছে চোরাপথে। এতে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু দেশে স্বর্ণ পরিশোধন কারখানা গড়ে উঠলে এই শিল্প থেকে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। একই সঙ্গে কারিগর থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।

বাজুস সভাপতি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক পথে ব্যবসা করতে চাওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে এ খাতের ব্যবসায়ীরা কিছুটা নিরুৎসাহও হয়ে পড়ছেন। চোরাচালান থামানো, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করা, কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশে জুয়েলারিশিল্প গড়ার বিকল্প নেই। এটা হলে চোরাকারবারি বন্ধ হবে। দেশের টাকা পাচার বন্ধ হবে। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে সরকার, যা দিয়ে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সহজ হবে।

কাঁচামাল পরিশোধন করে স্বর্ণ উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি শতভাগ রপ্তানিমুখী স্বর্ণ ও গহনা শিল্প গড়তে পারবে—এ প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ভারত প্রতিবছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জুয়েলারি রপ্তানি করে। বাংলাদেশেও সেটি সম্ভব। কারণ বাংলাদেশে যে ধরনের দক্ষ কারিগর আছে, তা পৃথিবীর অনেক দেশে বিরল।’ বাজুস সভাপতি এ সময় বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি দেশের জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে দেখেছি। তাতে বুঝেছি, কাজের ভালো সুযোগ ও পরিবেশ না পেয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক কারিগর অন্য দেশে গিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের হাত দিয়ে বিশ্বমানের অলংকার তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের অনেক কারিগর বাংলাদেশ থেকে গিয়ে কাজ করছেন ভারত ও দুবাইয়ে। যদি দেশে এই শিল্প তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশীয় কারিগরদের সুদিন ফিরবে। পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করা স্বর্ণশিল্পীরা দেশে এসে কাজ করতে পারবেন। দেশে কাজ না পেয়ে স্বর্ণশিল্পের দক্ষ কারিগরদের অনেকে পূর্বসূরিদের পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’

বাংলাদেশের স্বর্ণশিল্পের সবচেয়ে বড় অপবাদ হলো, পাইকারি পর্যায়ে স্বর্ণ কেনাবেচায় বৈধ কাগজপত্র বিনিময় হয় না। অর্থাৎ কেনাবেচার পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ। স্বর্ণ পরিশোধন ও উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে কি এই অপবাদ ঘুচবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা এই ধরনের অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। সে কারণেই দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিকল্প নেই।’

স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা উচিত। কারণ বাজুস হলো এই শিল্পের মূল অংশীজন আর বাংলাদেশ ব্যাংক হলো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। তাহলে গ্রাহক ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষই লাভবান হবে।

ঠিক কবে নাগাদ স্বর্ণ পরিশোধনের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল হলেই জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এই শিল্প ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে রপ্তানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জুয়েলারিশিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

গোল্ড ব্যাংক প্রসঙ্গেও কথা বলেন বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে সোনা বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নেওয়া যেত। কিন্তু এখন সেই নিয়ম আর নেই। এটা চালু করা জরুরি। এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি নীতিমালা দরকার, যার আওতায় বাজুসের মাধ্যমে দেশে গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ করা সম্ভব। গোল্ড এক্সচেঞ্জে প্রতিদিনের মূল্য নির্ধারণ হবে। এটা হলে সোনা চোরাচালান, পাচারের যেসব কথা শোনা যায়, তা বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

SOURCE : কালের কণ্ঠ