All news

মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান

মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান

বাংলাদেশে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক ক্যানোনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথান হাওলা গতকাল সন্ধ্যায় কলকাতার মহাজাতি সদনে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাকে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। চারটি বিষয়ে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য তাকে এ সম্মান দেওয়া হয় : বিনা সুদে গরিবদের মধ্যে ঋণ বিতরণ, অসহায় মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, শীর্ষস্থানীয় ছয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও শিক্ষার বিকাশসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজে অবদান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামল সেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গণশিক্ষা ও সংসদীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটির সম্পাদক মুরালিভাই, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো বাণী পড়ে শোনান ‘মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক ক্যানোনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড’ কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্থনি অরুণ বিশ্বাস। শেখ হাসিনা তার বাণীতে অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করে মাদার তেরেসার জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। মাদার তেরেসার নামাঙ্কিত এ পুরস্কার পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন বলে জানান বসুন্ধরার কর্ণধার। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। তবে এ আনন্দ শুধু আমার একার নয় গোটা বাংলাদেশেরও। কারণ আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করি দেশের কিছু সেবা করতে। আমি মনে করি এ পুরস্কার আমাকে দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করতে আরও বেশি উৎসাহিত করবে।’ বাংলাদেশের স্বনামখ্যত এই শিল্পপতি বলেন, ‘মাদার তেরেসার অনেক আগেই সন্তু হওয়া উচিত ছিল। তবুও আমরা খুশি দেরিতে হলেও তিনি তার উপযুক্ত উপাধি পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, মাদার তেরেসার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশে নিজের মতো করেই সামাজিক উন্নয়নে যথাসাধ্য করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘১২ বছর ধরে আমরা সুদহীন ঋণ দিচ্ছি। আমাদের হাসপাতালগুলোতেও ন্যূনতম অর্থের বিনিময়ে সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সেখানে আমরা ব্যবসার কোনো চিন্তা করি না।’ এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্থনি অরুণ বিশ্বাস বলেন, ‘মাদারের মৃত্যু পর্যন্ত আমরা তার সঙ্গে ছিলাম। আমি প্রথম তাকে সন্তু উপাধি দেওয়ার জন্য ভ্যাটিকান সিটিকে চিঠিও পাঠিয়েছিলাম। এ অনুষ্ঠান যখন হচ্ছে, এর মাত্র দুই দিন আগে রবিবার মাদার ভ্যাটিকানে “সন্তু” উপাধি পান।’ মাদার তেরেসার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা জানিয়ে অ্যান্থনি বলেন, ‘মাদারের নিজ হাতে লেখা চিঠি পড়ে আজও আমি আবেগতাড়িত হই।’ অ্যান্থনি আরও বলেন, বিশ্বের এত শহর থাকতেও মাদার কলকাতাকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তাকে এ কাজ করতে প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। তাকে গ্রামে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। আজ সেই মহীয়সী সিস্টার থেকে মাদার আর মাদার থেকে সন্তু হয়েছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে লালথান হাওলা বলেন, মাদার তেরেসা বিংশ শতাব্দীর মানবতার সেরা মুখ। তিনি বলেন, ‘কলকাতায় যারা মাদারকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা সত্যিই ভাগ্যবান। আর আমরা ভাগ্যবান যে মাদার ভারতে এসে এই নিপীড়িত, ক্লিষ্ট, রোগাক্রান্ত মানুষের জন্য যে সেবার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, কলকাতার মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে বিশ্বের ১৩০ দেশে প্রায় সাড়ে চারশ শাখা তৈরি করে সেখানে কয়েক হাজার সন্ন্যাসীর মাধ্যমে সেবার মহিমা ছড়িয়ে গেছেন মাদার। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রতিমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যাদের নিয়ে মানুষ কখনো ভাবেনি, যারা রাস্তার পাশে পড়ে থাকতেন, রোগে ভুগতেন সেসব মানুষকে নিয়ে যিনি শুধু ভাবতেন তাই নয়, বরং এগিয়ে গিয়ে নিজের হাতে সেবা করেছন যিনি তিনি মাদার তেরেসা। তিনি আরও বলেন, ‘যে শহর থেকে মাদার এই দরিদ্রের সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন সেই শহরের প্রতিনিধি হিসেবে মমতা ব্যানার্জিকে ভ্যাটিকান সিটিতে আমন্ত্রণ জানানোয় বাংলার মানুষ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করছি।’