পূর্বে বিষখালী, পশ্চিমে সুন্দরবনসংলগ্ন বলেশ্বর নদ আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বিষখালী ও বলেশ্বর নদের মধ্যবর্তী পাথরঘাটা উপজেলা। নদীভাঙনকবলিত এই জনপদে মৎস্যজীবীসহ দরিদ্রদের বাস। জীবিকার তাগিদে স্বজন ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করতে যান এখানকার জেলেরা।
অথই সাগরে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে অনেকেই মারা যান, অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও অনেক জেলের সন্ধান পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর ধরে এখানকার পরিবারের সদস্যরা পথপানে চেয়ে থাকে। পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবার।
ওই পরিবারের হাল ধরতে হয় নারীদের (স্ত্রী)। মাটির কাজ, মাছ ধরাসহ নানা ঝুঁকির কাজে যুক্ত হন উপকূলের নারীরা। পাথরঘাটায় এমন চিত্র চোখে পড়ার মতো। উপকূলের এই দরিদ্র নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে আশীর্বাদ হয়ে এলো বসুন্ধরা গ্রুপ।
দেশসেরা সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে উপকূলের অতিদরিদ্র নারীদের বিনা মূল্যে তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।
গত ১৬ মে শুক্রবার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের হলরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে অসচ্ছল, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। এ সময় উপস্থিত নারীরা তাঁদের জীবনকাহিনি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নারীদের কাহিনি শুনে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়।
কেঁদে ফেলেন উপস্থিত অতিথিরাও। নারীদের চোখেমুখে বিষণ্নতার ছাপ, চোখে টলমল করছে পানি। তবে তাঁদের এই কান্না কষ্টের মধ্যেও আনন্দের কান্না। তাঁদের মধ্যে অনেকে স্বামীহারা, অনেকে বাবাহারা, অনেকে সন্তানহারা। তাঁদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া সেলাই মেশিন পেয়ে এখন তাঁরা স্বপ্ন বুনছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা মনিরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেন এসমে সিকদার, পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা বজলুর রহমান, পাথরঘাটা মডেল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেন খান, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জসিম উদ্দিন, পাথরঘাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নজমুল হক সেলিম প্রমুখ।
জাকারিয়া জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সারা দেশে দুই হাজারের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেলাই মেশিনটি যথাযথভাবে কাজে লাগান এবং নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় শুভসংঘের এই সহানুভূতির হাত বদলে দিচ্ছে হাজারো জীবনের গল্প। আমরাও চাই উপকূলের নারীদের স্বপ্নের সারথি হতে, তাঁদের উপার্জনের সঙ্গে থাকতে। তাঁরা যেন ভাগ্য বদলাতে পারেন, পরিবারের অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারেন।’
মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ যে মানবিক উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে, তা অনেক প্রশংসনীয়। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও মানবিক সেবায় তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এই সেলাই মেশিন উপহার সেই মহতী প্রয়াসেরই অংশ। তারা শুধু ব্যাবসায়িক সফলতায় থেমে থাকেনি, সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে পাথরঘাটার অসচ্ছল, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীর হাতে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। এটি তাঁদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে, ইনশাআল্লাহ। এই মেশিন শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস ও সম্মান ফিরে পাওয়ার প্রতীক। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ভূমিকা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও মানবিক সহায়তার মতো খাতে বসুন্ধরা শুভসংঘের কার্যক্রম অত্যন্ত ইতিবাচক। আমি আশা করি, এই সহায়তা পেয়ে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন এবং সমাজে তাঁদের অবস্থান আরো দৃঢ় হবে।’
সেলাই মেশিনে ভাগ্য বদলাতে চান হনুফা (লিখেছেন সাইমুন রহমান এলিট)
২০০৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় হনুফা বেগম আর জাকিরের। সংসার মোটামুটি চলছিল। পরিবারকে আরেকটু সুখে রাখতে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে ভিটামাটি বিক্রি করে সৌদি আরব যান জাকির। পরিবারের মধ্যে আনন্দও ছিল।
সুখ আর কপালে সইল না। সৌদি যাওয়ার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জাকিরের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন হনুফা। খোঁজ পেয়ে হনুফার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ।
সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তাঁকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। হনুফা বলেন, ‘তিন বছর ধরে কাঁথা সেলাই করে বিক্রি করি। যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের খরচ চালাই। এর মধ্যেই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ।
ফ্রি সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে একটি সেলাই মেশিন পাই। এটিই আমার জীবনের চাকা সচল করবে। ঘুরে যাবে আমার ভাগ্য। আমি একটি কথাই জানি, মেশিনের চাকা যত ঘুরবে, ততই আমার ভাগ্য ঘুরবে। আমি আর অভাবী থাকতে চাই না।
অনেক কষ্ট করেছি। সন্তানদের আর কষ্ট দিতে চাই না। এই অভাবের সময় বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি এক নগণ্য মানুষ। অনেক অভাবী। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে নেক হায়াত দান করুন। সব বালা-মুসিবত থেকে দূরে রাখুন।’
‘সন্তানগো এহন তিন বেলা খাইতে দিতে পারমু’
‘গত কোরবানির পর আর গোশত খাই নাই। কয়েক দিন আগে পাশের বাড়িতে গরুর গোশত রান্না করছে। হেই ঘ্রাণ পাইয়া আমার আট বছরের মেয়ে ফাতিমা গরুর গোশত খাইতে চাইছে। পোড়া কপাল আমার, এক হাজার টাকা মাসিক বেতনে একটা কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করি।
হেইয়া দিয়া কি গোশত কেনা যায়?’ কথাগুলো বলে অঝোরে কেঁদেছেন মুন্নি আক্তার। শত বঞ্চনা আর কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন বিধবা মুন্নি। তাঁর এমন অসহায়ত্বে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে অসহায় দরিদ্র বিধবা মুন্নি বিনামূল্যে সেলাই মেশিন উপহার পান।
দীর্ঘ সময় ধরে মেশিনটি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখেন। আনমনে বলে ওঠেন, ‘আমার সন্তানগো এহন তিন বেলা খাইতে দিতে পারমু।’ বরগুনার মুন্নির স্বামী ইসমাইল চার বছর আগে মারা যান। অভাবের সংসারে দুই সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন মুন্নি।
উপায় না পেয়ে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকরি নেন, কিন্তু তাতে তো আর সংসার চলে না। এমন সময় বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রশিক্ষণ পেয়ে বিনামূল্যে একটি সেলাই মেশিনও উপহার পান। এই উপহারটিই মুন্নি তাঁর একমাত্র পুঁজি ধরে এগিয়ে যেতে চান। ছেলে-মেয়েকে দুই বেলা ভাতের ব্যবস্থা করার দৃঢ় প্রত্যয় তাঁর। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্রমজীবী বাবা সোমেদ আলীর আবাসন প্রকল্পের ঘরে থাকেন।
মুন্নি বলেন, ‘আমার মাইয়া-পোলার অনেক চাওয়াই আমি পূরণ করতে পারি নাই। আইজ আমার সেই আশা পূরণের দিন। এহন আমি বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া সেলাই মেশিন দিয়া কামাই (রোজগার) কইরা বাচ্চাগো পড়ালেহা, খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করমু। আমি নামাজ পইড়া দোয়া করি, আল্লাহ যেন বসুন্ধরারে সামনের দিকে আরো আগাইয়া নিয়া যায়। যারা আমাগো রুটি-রুজির ব্যবস্থা করছে, তাদের জন্য মন খুইল্লা দোয়া করি।’
সমুদ্রে নিখোঁজ স্বামী, দুঃখ-কষ্ট ও কান্নার গল্প (লিখেছেন মিজানুর রহমান)
সিডরের সময় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন স্বামী। তখন একমাত্র ছেলের বয়স দেড় বছর। সেই থেকে শুরু হয় মর্জিনার জীবনসংগ্রাম। দেড় বছরের ছেলেকে কোলে নিয়েই মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে হয়েছে।
এখনো চলছে বেঁচে থাকার লড়াই। তবে সেই লড়াইয়ের সাহসী সহযোদ্ধা হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিন মাস বিনামূল্যে মর্জিনাসহ আরো অনেক নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করেছে তারা। এবার তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হলো সেলাই মেশিন।
সেই মেশিন হাতে পেয়ে আনন্দিত দেখা যাচ্ছিল মর্জিনাকে। স্বামীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে দুঃখে কেঁদেছেন অনেকক্ষণ। তবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা পেয়ে এখন তাঁর দুঃখ-কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে বলে জানালেন মর্জিনা।
মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘এই সেলাই মেশিন পেয়ে আমি অনেক খুশি। এটা দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ।’
তাঁর অভিব্যক্তি জানান দিচ্ছিল, এ যেন শুধু একটি যন্ত্র নয়, তাঁর জন্য জীবনের নতুন শুরু। শুধু মর্জিনা নয়, পাথরঘাটার অনেক নারীর জীবনে ঘটে গেছে এমন করুণ বাস্তবতা। একই রকম কষ্টের গল্প রিনা বেগমেরও। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই তাঁর স্বামী মাছ ধরতে গিয়ে সাগরে নিখোঁজ হন।
সেই ট্রলারে ছিল ১৮ জন, ফিরে আসেন মাত্র ১০ জন। বাকি আটজনের মধ্যে রিনার স্বামীও ছিলেন। ‘ওকে আর খুঁজে পাইনি। আমাকে আর ছেলেকে রেখে গেছে। তখন ওর বয়স ছিল মাত্র আট বছর।’ বললেন রিনা। সেই থেকে তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। মা জেলেদের জালে পড়ে থাকা মাছ কুড়িয়ে আনতেন। তা বিক্রি করে চলত সংসার। কষ্ট করেই ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছেন। সেই ছেলে এখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সন্তানকে শিক্ষিত করার স্বপ্নে কখনো হাল ছাড়েননি। ‘ওকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছি।’ গর্বের সঙ্গে বলছিলেন রিনা। তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল একটি সেলাই মেশিন। তাঁর কথায়, ‘আমি ভাবতাম, যদি একটি সেলাই মেশিন থাকত, তাহলে ঘরে বসেই কাজ করে সংসার চালাতে পারতাম। তা দিয়ে কাজ করে ছেলেকে আরো ভালোভাবে মানুষ করতে পারতাম। বসুন্ধরা গ্রুপ সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই সেলাই মেশিন আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আমি খুবই কৃতজ্ঞ বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে।’
মর্জিনা ও রিনা বেগম শুধু নাম নয়, তাঁরা পাথরঘাটার বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের প্রতিনিধি। বরগুনার উপকূলীয় জনপদ পাথরঘাটার বাতাসে সেদিন ভেসে বেড়াচ্ছিল আশার আলো। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকা থেকে আসা অসচ্ছল, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা এই উপহার পান। মেশিন হাতে পাওয়ার মুহূর্তে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকে। কারো চোখে ছিল অশ্রু, কারো ভবিষ্যতের স্বপ্ন। তাঁদের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। কারণ এটি শুধুই একটি যন্ত্র নয়, বরং বেঁচে থাকার, এগিয়ে চলার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এক নতুন পথ।
পাথরঘাটার মতো উপকূলীয় দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকা নারীদের এই সহায়তা যেন এক আশীর্বাদ। সাগরে প্রাণ হারানো স্বামীদের শূন্যতা কখনোই পূরণ হবে না, কিন্তু সেই শূন্যতা ঘেরা জীবনকে নতুনভাবে সাজানোর একটি সুযোগ এখন তাঁদের হাতে। এই গল্পগুলো কেবল মানবিক কষ্টের বর্ণনা নয়, এগুলো হচ্ছে সাহস, সংকল্প আর স্বপ্নের গল্প। বসুন্ধরা শুভসংঘ দেশের নানা প্রান্তের অসহায় নারীদের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে। যে নারীরা একদিন শুধুই বেঁচে থাকার লড়াই করতেন, তাঁরা এখন নিজের হাতে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন; যা শুধু পাথরঘাটার নারীদের নয়, গোটা সমাজকেই জানিয়ে দেয়, চাইলেই বদলে দেওয়া যায় জীবনের গতিপথ।
সামাজিক দায়িত্ব পালনে অতুলনীয় বসুন্ধরা গ্রুপ
মিজানুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাথরঘাটা, বরগুনা
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলাটি খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখানকার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। উপকূলীয় এই এলাকার মানুষের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে এ অঞ্চলের নারীরা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। অসহায় পরিবারগুলো খেয়ে-পরে থাকতে পারবে।
বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু শিল্প-অর্থনীতিতে নয়, সামাজিক দায়িত্ব পালনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা অতুলনীয়। উপকূলের চরাঞ্চলের অসহায় মানুষকে বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছে তারা। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও মানবিক সেবার ক্ষেত্রে তাদের কাজ প্রশংসনীয়।
আজকের এই সেলাই মেশিন উপহার সেই মহতী প্রয়াসেরই অংশ। আমি যখন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে ছিলাম, তখনো বসুন্ধরা শুভসংঘের অনেক ভালো ভালো কাজ দেখেছি। যে চরাঞ্চলে শিক্ষার ছোঁয়া লাগেনি, ওই চরে বসুন্ধরা গ্রুপ স্কুল করেছে, যে স্কুল থেকে এখন শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। আমরা আশা করছি, পাথরঘাটায়ও বসুন্ধরা এ রকমের উদ্যোগ নেবে।
বসুন্ধরার মতো সবার এগিয়ে আসা উচিত
ইসমাইল হোসেন এসমে শিকদার, সদস্যসচিব, পাথরঘাটা পৌর বিএনপি
অত্যন্ত দরিদ্র এলাকার মানুষ আমরা। এখানকার অতিদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্টে দিন যাপন করছে। খেয়ে না খেয়ে উপকূলের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। এসব অতিদরিদ্র মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
তাদের সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র পরিবারের নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। জেলেপল্লীতে নারীদের অসহায়ত্বের কথা আমরা শুনেছি। কত কষ্টে তাদের দিন যাচ্ছে, তা-ও আমরা উপলব্ধি করছি, নিজের চোখে দেখেছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের মতো অন্যরাও যদি অসহায়দের পাশে এগিয়ে আসে, তাহলে উপকূলের জেলেপল্লীর অতিদরিদ্ররা কিছুটা হলেও ভালো থাকবে।
আশা করছি, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু সেলাই মেশিন দিয়ে তাদের কাজ শেষ করবে না, উপকূলের মানুষের জন্য নানা রকমের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
অবহেলিত নারীদের জন্য ভালো উদ্যোগ
মাওলানা মো. বজলুর রহমান, সভাপতি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পাথরঘাটা পৌর শাখা
উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি প্রশংসনীয়। এমন উদ্যোগ যদি সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নেয়, তাহলে আমাদের দেশ স্বনির্ভরশীল হয়ে যাবে। প্রতিটি ঘর থেকে যদি নারীরা উদ্যোক্তা হয়ে প্রতিষ্ঠিত হন, তাহলে সমাজে অতিদরিদ্র মানুষ থাকবে না।
বসুন্ধরার মতো এভাবে যদি সবাই এগিয়ে আসে, তাহলে অবহেলিত থাকবে না কেউ। ইচ্ছা থাকলে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে একটি পরিবার চালানো সম্ভব। দিন দিন মানুষ সচেতন হচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে। আমাদের মায়েরা যাঁরা রয়েছেন, আমাদের বোনেরা যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তাঁদের প্রতি অনুরোধ, যথাযথভাবে এই সেলাই মেশিন কাজে লাগাবেন। পর্দায় থেকেও বাড়িতে বসে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে। এই মেশিন দিয়ে আপনারা ঘরের কাজগুলো করবেন। এক পর্যায়ে আপনাদের এলাকায় একটি চাহিদা তৈরি হবে।
এরপর এই মেশিন দিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। আপনারা আর পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে থাকবেন না। যে নারী এই সেলাই মেশিনটি পেয়েছেন, তিনি ভাগ্যবতী। কারণ তিনি একটি পরিবারকে বাঁচাতে পারবেন।
সবাই এগিয়ে এলে দরিদ্র মানুষ থাকবে না
মাওলানা মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পাথরঘাটা উপজেলা শাখা
বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার অসহায় নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দরিদ্র নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তারা। বসুন্ধরার মতো দেশের অন্য কম্পানিগুলো যদি উপকূলের মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে একদিন দরিদ্র বলতে কোনো শব্দ থাকবে না।
অনেক সময় দেখেছি, ব্যক্তি উদ্যোগে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষকে সহায়তা করা হয়, কিন্তু বসুন্ধরা শুভসংঘের এই কাজ অনেকটা ভিন্ন রকমের।
বিনামূল্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ দিয়ে আগে উপকূলীয় নারীদের দক্ষ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে সবাই যখন কাজ শিখে ফেলেছেন, তখন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই অনেক প্রশংসনীয়। বসুন্ধরার মতো অন্যরাও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে—এটিই প্রত্যাশা করছি।
SOURCE : কালের কণ্ঠবসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে উপকূলীয় দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন প্রদান
Bashundhara Group Provides Training and Sewing Machines to Poor Coastal Women
৫৩ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের
Bashundhara Foundation Distributes Tk 5.3 Million in Interest-Free Loans
বসুন্ধরা গ্রুপের শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছে জাবির ১১৬ জন শিক্ষার্থী
Bashundhara Group Supports 116 JU Students with Scholarships
কসবায় বসুন্ধরার সহায়তায় চক্ষু চিকিৎসা পেল ৫০০ রোগী
500 Patients Receive Eye Treatment in Kasba with Bashundhara Group’s Support
৬০ জন দরিদ্র মহিলাকে সেলাই মেশিন দান করলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Donates Sewing Machines to 60 Poor Women in Bancharampur