All news

দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপের যেন ভালো হয়

দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপের যেন ভালো হয়

বয়সটা বেড়ে গেছে মো. শহিদুলের। ১৬ কেজি ওজনের বস্তাটি তুলতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল বলে একজন এগিয়ে এসে রিকশা পর্যন্ত তুলে দিল। ছাত্রাবাসে রান্নার কাজের বুয়া মোছা. খাদিজা কোমরে বস্তা তুলে দ্রুত পা ফেলে চলে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে খাদিজা জানান, ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তার কোনো কাজ নেই। বেকার হয়ে আছেন এক মাস হলো। ঘরে কোনো খাবার নেই। স্বামী দিনমজুুরি করে যা পান তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল আর তিন কেজি আটা এখন তার খাবারের সম্বল। এ দিয়ে তার পাঁচ থেকে ছয় দিন চলে যাবে। এ চাল দিয়ে রান্না শুরু করবেন বলে তিনি দ্রুত চলে যাচ্ছেন। বয়সের কারণে নুয়ে পড়া শহিদুলের দোকান কর্মচারী ছেলে এখন বেকার। তিনবেলা খাবার সংগ্রহ তার কাছে বড় কষ্টকর। বসুন্ধরা গ্রুপের মানবিক এই সহায়তা তার কাছে অনেক মূল্যবান। নিজে চলতে না পারলেও খাবারের বস্তাটি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেবেন বলে। শহিদুল, খাদিজার মতো আরও ৭০০ পরিবারের সদস্য গতকাল সকালে বগুড়া জিলা স্কুল মাঠে বসুন্ধরা গ্রুপের খাবার নিতে এসেছিলেন। খাবার হাতে পেয়ে তাদের মুখে বিরাট প্রাপ্তির হাসি লেগে ছিল। সে হাসি নিয়েই বাড়ি ফিরে গেছেন তারা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কটা দিন নিশ্চিন্তে কেটে যাবে বলে। Bangladesh Pratidinবসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রীর বস্তা হাতে পেয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মোছা. আছিয়া বেগম বলেন, বাসি মুখে দোয়া করি, বসুন্ধরা গ্রুপের যেন ভালো হয়, তারা ভালো থাকে। বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পেয়ে আজাজ আলী প্রামাণিক জানান, তিনি বয়সের কারণে কাজ করতে পারেন না। ছোট ছেলে স্বর্ণের দোকানে কাজ করত। লকডাউনের কারণে তা-ও এখন করতে পারে না। ‘তোমাদের ত্রাণ পেয়ে ৭-৮ দিনের দুঃখ ঘুচিল বাবা। এই অসময়ে তোমরা ত্রাণ দিছো নামাজ পড়ে দোয়া করব।’ বললেন তিনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ করোনাকালে কর্মহীন, অসহায়, ছিন্নমূল পরিবারের মানুষজনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সারা দেশের মতো বগুড়া জেলায়ও ৪ হাজার পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা কালের কণ্ঠ’র পাঠক ফোরাম ‘শুভসংঘ’ সদস্যরা এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। বগুড়া সদর উপজেলার ৭০০ পরিবারকে মানবিক সহযোগিতা হিসেবে গতকাল এই ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হলো। মানবিক ত্রাণ সহযোগিতা তুলে দেন বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ও দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু। ত্রাণ বিতরণকালে বগুড়া পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞা শুভসংঘকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, শুভসংঘের ‘শুভ কাজে সবার পাশে’ এই স্লোগানটি চমৎকার। আজকের ত্রাণ বিতরণের আয়োজনটি বাংলাদেশে যত ভালো কাজ হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। আমাদের বগুড়া জেলা সদরে আজ ৭০০ পরিবার ত্রাণ পেয়েছে। পুরো জেলায় ৪ হাজার পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হবে। করোনার সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় শুভসংঘ এত চমৎকার একটি আয়োজন করে আমাদের ভাই-বোনদের অন্তত কিছুদিনের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। এর জন্য আমরা তাদের প্রাণ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান অসহায় পরিবারের মাঝে খাবার তুলে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ দিলেও আজ দেশের এই দুঃসময়ে অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত রেখেছে। বগুড়ার অসহায় মানুষের হাতে খাবার তুলে দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ এবং আয়োজকদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কালের কণ্ঠ বগুড়া অফিস প্রধান লিমন বাশার, শুভসংঘ বগুড়া জেলার উপদেষ্টা আবদুল মান্নান আকন্দ ও আলহাজ মোস্তাফা মাহমুদ শাওন, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামপদ মুস্তফী প্রমুখ। এদিকে জেলার দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলায় ৬০০ অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে শুভসংঘ। গতকাল দুপুরে উপজেলার দুপচাঁচিয়া দারুস সুন্নাহ্ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা মাঠে এবং আদমদীঘির সান্তাহার বি. পি. উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসুন্ধরা গ্রুপের এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘের সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির। এর আগে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ২৪ হাজার অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবারকে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘ।