All news

‘আল্লায় বসুন্ধরা মালিকের কামাইতে বরকত দিক’

‘আল্লায় বসুন্ধরা মালিকের কামাইতে বরকত দিক’

কোলে ছয় মাসের ছোট্ট শিশু সাদিয়া। মা পারভীন আক্তারের আঁচল ধরে খেলা করছে। নিজে নিজে হাসছে। কিন্তু সে জানে না কী হবে তার ভবিষ্যৎ। জন্মের পর বাবার আদর পায়নি। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন বাবা টুলু হোসেন। মায়ের আশ্রয়েই বেঁচে আছে সাদিয়া। আর মানুষের দেওয়া সাহায্যে দুই বেলা খাবার জোটে মা পারভীনের। ১০ বছরের ছেলেটিকে রেখে এসেছেন ঘরে। এই দুই সন্তান ছাড়া আর কেউ নেই পারভীনের। দুই সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। অশ্রুসিক্ত নয়নে বলছিলেন কষ্টকর জীবনের কথা। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা তাঁর হাতে তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তার ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল আর তিন কেজি আটা। সহায়তার খাদ্যসামগ্রী পেয়ে পারভীন বলেন, ‘হামরা আসহায়। বসুন্ধরা মালিক হামাকেরে খাবার দিচ্চে। তোমাকের জন্যে দোয়া করিচ্চি। আল্লায় তোমাকেরে বাঁচি রাকুক।’ অসহায় জহুরা খাতুনও পেয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তার খাদ্যসামগ্রী। তিনি বলেন, ‘হামার স্বামী-ছোল নাই। মানুষেরতে চাইয়্যে-চিন্তে (ভিক্ষা করে) খাই। যার দয়া হয় তারা দিয়্যা যায়, যার না হয় সে দেয় না। আজকে তোমাকের অনেক খাবার পাচ্চি। আখেরি মোনাজাত করমু। দোয়া করমু। আল্লায় বসুন্ধরা মালিকের কামাইতে বরকত দিক। আখেরাতে ভালো করুক।’ গতকাল শুক্রবার বগুড়া জেলার আরো তিনটি উপজেলায় হতদরিদ্র অসহায় ৯০০ পরিবারের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। সকালে গাবতলী উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩০০, সারিয়াকান্দি উপজেলার শালুখার চরে ও সারিয়াকান্দি পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে ৩০০ এবং সোনাতলা উপজেলার মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ৩০০ পরিবারের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। শালুখার চরে বসুন্ধরার খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন রেশমা বেগম। নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব তিনি। দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। বসুন্ধরার ত্রাণসামগ্রী পেয়ে রেশমা বলেন, ‘নাওয়ে করে তোমরা এত দূর আসি হামাকেরে সাহায্য দিলা, তোমাকের জন্য অন্তরতে দোয়া আসবি। তোমাকের বসুন্ধরাক ভালো হবি।’ বসুন্ধরার ত্রাণসামগ্রী পেয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খেতে-খামারে কাম করি। সব সময় কাম পাই না। ছোল-পোল নিয়া ডাল-ভাত খাতে কষ্ট হয়। আজ তোমাকের ত্রাণ পেয়ে উপকার হইল। কিছুদিন খাবার পারমু।’ গাবতলী উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রওনক জাহান বলেন, ‘আমি কালের কণ্ঠ শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা করোনার এই মহামারির সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু যারা ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাতে হাতে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আমাদের উপজেলা তাদের এই মহৎ কাজের অংশ হওয়ায় আমি তাদেরকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন ভবিষ্যতেও বসুন্ধরা গ্রুপ যেন এমন কার্যক্রম চলমান রাখতে পারে। আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনায় আমাদের আশপাশের অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনরাও মারা যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের জীবন বাঁচাতে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কেউ অযথা চা খাওয়া কিংবা আড্ডা দেওয়ার জন্য বাইরে যাবেন না। সবাই বাসায় থাকবেন। মাস্ক পরবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সরকারের দেওয়া বিধি-নিষেধ মেনে চলবেন। আপনাদের কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমাদের জানাবেন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো দায়িত্ব পালন করব।’ সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘আমি পৌরসভার পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে শ্রদ্ধা এবং দোয়া করছি। দেশের এই দুঃসময়ে সারিয়াকান্দি উপজেলার অসহায় মানুষের মাঝে তারা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। শুধু তাই নয়, পুরো জেলা এবং দেশব্যাপী তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেন আপনাদের আরো বেশি সহযোগিতা করতে পারেন। আমরা আশা করি শুভসংঘ আমাদের এই উপজেলায় আরো মানুষের পাশে দাঁড়াবে। আমাদের সহযোগিতা করবে।’ গাবতলী উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মুক্তাসহ শাহজাহান আলী, ইসলাম রফিক, হযরত আলী হিরণ, মনির ইসলাম পিপুল, কৌশিক আহমেদ, রতন পাইকার ও সাগর মিয়া। সারিয়াকান্দি উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ রাশেদুল ইসলাম মুনু, খাইরুল আলম, রফিকুল ইসলাম, মেহেদি হাসান সুফল, আলেফা, মিনহাজ উদ্দিন, সিফন, সাকাত ও ফারুক। সোনাতলা উপজেলায় বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তার খাদ্যসামগ্রী পেয়ে দুললি বেগম বলেন, ‘হামার ১০ বছর হচ্চে স্বামী মারা গেছো। এহন কেউ খোঁজ-খবর লয় না। ছোল ট্যাকা দেয় না। একাই থাকি। আগে কামকাজ করবার পারতাম, এহন পারিচ্চি না। মাইনষেরতে চাইয়া-চিন্তা (ভিক্ষা করে) খাই। তোমাকেরা হামাক দুইটা ডাইল ভাত খাবার দিচ্ছো। তোমাকেরা আরো বড় হও।’ ১৮ বছর আগে পা হারিয়েছেন আব্দুল হামিদ। ত্রাণসামগ্রী নেওয়ার পর লাঠিতে ভর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বুড়া হইয়া গেছি। কোনো কাম করবার পারিচ্চি না। হামার ছোল নাই। বয়স্ক ভাতার ট্যাকা দিয়া খাই। তোমাকের ত্রাণে অনেক দিন চলবার পারমু। তোমাকের জন্য দোয়া করিচ্চি, মঙ্গল হোক।’ বসুন্ধরার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘করোনায় এই লকডাউনের মধ্যে বগুড়া জেলাসহ দেশজুড়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। আমি সোনাতলা উপজেলার পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা আজকে খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন আপনারা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করবেন। বসুন্ধরা গ্রুপ যেন ব্যবসায় আরো ভালো করতে পারে এবং আপনাদের পাশে আরো বেশি করে দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাই নিজের জীবনকে সুরক্ষা করতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সরকারের দেওয়া বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলবেন। কেউ অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। মাস্ক পরবেন। সবাই সচেতন থাকবেন।’ সোনাতলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন সোনাতলা মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মতিয়ার রহমান, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্ম ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ জাহিন, বগুড়া জেলার উপদেষ্টা নাহারুল ইসলাম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাব্বির হোসেন সুজনসহ আব্দুল মতিন, তুষার, জিতু, মানিক, অমিত চঞ্চল, সিরাজুল, মিরাজ, জিহাদ, শাওন, নাহিদ, রিশাত, সুজন, সোহেল, ফিলিপস প্রমুখ। গতকাল শুক্রবার ত্রাণ বিতরণের সকল কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, বগুড়া জেলার উপদেষ্টা মোস্তফা মাহমুদ শাওন, সাধারণ সম্পাদক শিশির মোস্তাফিজ, সদস্য মশিউর রহমান জুয়েল এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন রনি।