All news

মানিকগঞ্জে দুস্থদের ত্রাণ দিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র

মানিকগঞ্জে ৩০০০ অসহায় মানুষের মধ্যে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

একটি দোকানে মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম দাশড়া গ্রামের বাবুল মিয়া। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িতে স্ত্রী, এক সন্তান আর মাকে নিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল তাঁর সংসার, কিন্তু প্রায় ১৪ মাস আগে করোনার কারণে লকডাউনে সেই দোকান বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর চাকরিও চলে যায়। বর্তমানে দোকানটি খুললেও মালিক তাঁর তিন কর্মচারীর দুজনকে বাদ দিয়েছেন, এর মধ্যে বাবুল মিয়াও রয়েছেন। সঞ্চয়ের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় ছয় মাস ধরে পরিবার নিয়ে কোনোমতে আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল তাঁর।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের পাঠানো উপহারের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তাঁর মুখে ফুটল অমলিন হাসি। বাবুল মিয়া বললেন, ‘কয়েক দিনের জন্য হলেও স্বস্তি পেলাম। মায়ের মুখে, বউ-বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিতে পারব। দোয়া করি, আল্লাহ যেন সায়েম সোবহান সাহেবের মঙ্গল করেন।

শুধু বাবুল মিয়াই নন, তাঁর মতো তিন হাজার অসহায় দুস্থ মানুষের হাতে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যানের উপহারের খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়ার এই খাদ্য সহায়তায় প্রত্যেকে পেয়েছে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা।

করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাত হায়দার।

উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি আব্দুল মজিদ ফটো, পৌর মেয়র রমজান  আলী, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের স্থায়ী সদস্য আমিনুল ইসলাম, মো. মারুফ কাজী, মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুদেব সাহা, মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টপু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান জনি প্রমুখ।

বক্তব্যে সাজ্জাত হায়দার বলেন, ‘সায়েম সোবহান আনভীর একজন সচেতন হৃদয়বান মানুষ হিসেবে এবং সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে  করোনাসংকটে অসহায়-দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সারা দেশে তাঁর এই খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চলমান। যত দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, এই সহায়তা কর্মসূচিও চলমান থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, মানিকগঞ্জের আরো কয়েকটি স্থানে এই কর্মসূচির আওতায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগে মানিকগঞ্জের অসহায়, দুস্থদের পাশে সহায়তার হাত নিয়মিতভাবে বাড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের এই কর্মসূচি সরকারের ত্রাণ কর্মসূচির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বসুন্ধরার এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সীতাকুণ্ডে তিন হাজার দুস্থ পেল শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের খাদ্য উপহার

এদিকে ছেলে-মেয়ে সবই আছে বৃদ্ধা ছেনোয়ারার, কিন্তু কেউই মায়ের খোঁজ নেয় না। ফলে অর্থকষ্টে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকুল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব এই নারীর। গতকাল বিকেলে এই বৃদ্ধার হাতে উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয় লে. শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেড। খাদ্য উপহার পেয়েই ছেনোয়ারার মুখে যেন বাঁধভাঙা হাসি। খুশিতে আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে তিনি বলেন, ‘এই খাবারে আমার অনেক দিন চলে যাবে। যারা ঢাকা থেকে এসে আমাকে এতগুলো খাবার দিল তারা আরো বড় হোক, আমাদের যেন সব সময় সহযোগিতা করতে পারে—এই দোয়া করি।’

শুধু বৃদ্ধা ছেনোয়ারাই নন, তাঁর মতো তিন হাজার দুস্থ মানুষের মধ্যে গতকাল করোনাকালীন ত্রাণ হিসেবে খাদ্য উপহার বিতরণ করা হয়েছে লে. শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের অর্থায়নে।

গতকাল বিকেলে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ছেনোয়ারা ছাড়াও বোয়ালিয়াকুলের জোছনা বেগম, আকিলপুরের বৃদ্ধ রহমত উল্লা, উত্তর বাঁশবাড়িয়ায় আনোয়ার হোসেনসহ এ ইউনিয়নের দেড় হাজার মানুষ খাদ্য উপহার পেয়েছে। এতে তারা প্রত্যেকেই ভীষণ খুশি। বৃদ্ধ রহমত উল্লা বলেন, ‘আজকে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব আমাদের একসাথে এতগুলো খাবার দেওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হলাম। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। যাঁরা এই খাবার দিয়েছেন আল্লাহ যেন তাঁদেরকে সব সময় এভাবে সাহায্য করার তৌফিক দেন, এই দোয়া করি।’ এর আগে সকাল ১১টার দিকে উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে আরো দেড় হাজার অসহায় দরিদ্র মানুষকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। উপজেলার দুই ইউনিয়নে মোট তিন হাজার পরিবারকে গতকাল ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।  

লে. শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের পক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুর রহমান। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমাম উদ্দিন চৌধুরী আদিল ও আজিজুর রহমান জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান দুটি হয়। দুটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী, বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কো. লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (কো-অর্ডিনেশন) জহিরুল হক, ব্যবস্থাপক শেখ মাহতাব তানীম, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী, বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা আবুল হাসনাত, মো. আল-হেলাল, মোহাম্মদ রাজীব, মোহাম্মদ সোহাগ মিয়া, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. রফিকুল আলম, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান, বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ফয়েজুর রহমান বলেন, ‘শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেডের সুযোগ্য সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান একজন নিঃস্বার্থ সমাজসেবক ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিত্ব। তিনি সব সময় দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। করোনার এই মহামারিতে আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তিনি এসব খাদ্য উপহার আপনাদের জন্য পাঠিয়েছেন। আপনারা সবাই তাঁর জন্য, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহানসহ সব কর্মকর্তার জন্য দোয়া করবেন। যেন তাঁরা দেশের প্রত্যেক জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় যেভাবে ত্রাণসামগ্রী প্রদান করছেন, তা যেন অব্যাহত রাখতে পারেন।’

SOURCE : কালের কণ্ঠ