All news

বিপিএল ফুটবলে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

বিপিএল ফুটবলে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

বিপিএল ফুটবল লীগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে অভিষেক দল বসুন্ধরা কিংস। মুন্সীগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে সাইফ স্পোর্টিংকে ২-০ গোলে হারিয়ে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হতে সক্ষম হয় বসুন্ধরা কিংস। দলটি পেশাদার লিগে দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা তিন শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হল।

এর আগে একমাত্র আবাহনী তিন শিরোপা জয় করে হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। বসুন্ধরা কিংস এই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের দ্বিতীয় দল। মুন্সীগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বিপুল পরিমাণ দশকের উপস্থিতিতে তুলনা মূলক ভাল খেলে সাইফ স্পোর্টিংকে হারায় বসুন্ধরা কিংস। লিগে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন দলটি প্রতিটি খেলায়ই খেলোয়াড়রা ভাল খেলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। 

আবাহনীর হ্যাটট্রিকের তুলনায় বসুন্ধরার এই টানা তিনের মাহাত্ম্য আলাদা। নতুন একটি দলের টানা তিন শিরোপা জয়ের বিরল এক ঘটনা ঘটিয়ে দেশের ফুটবল ইতিহাসে এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী ফুটবল দলে পরিণত হয়েছে।

অবশ্য সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে তাদের মাঠে এই ম্যাচটি মোটেও সহজ ছিলনা কিংসের জন্য। পুরো ম্যাচে খারাপ না খেললেও প্রতিপক্ষের জালে গোল করতে সক্ষম হয়নি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। একাধিক সহজ সুযোগ পেলেও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। 

অপরদিকে বসুন্ধরা কিংস বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ নষ্ট করলেও দুইটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে খেললেও কোন গোল আদায় করতে সক্ষম হয়নি।কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোনও ভীষণ সতর্ক ছিল। তাদের দ্বিতীয় গোলটি করেন বিপুল আহমেদ।

২০ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে মুকুট ধরে রাখল কিংস। স্প্যানিশ এই কোচের হাত ধরে দলটি পেল সব মিলিয়ে ষষ্ঠ শিরোপার স্বাদ। এর মধ্যে ৩টি প্রিমিয়ার লিগ, ২টি ফেডারেশন কাপ ও একটি স্বাধীনতা কাপ।

প্রথম লেগে দুই দলের ৭ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে সাইফ স্পোর্টিংকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছিল কিংস। দ্বিতীয় লেগে গোলের ছড়াছড়ি না থাকলেও উত্তাপের কমতি ছিল না। ম্যাচে দুই পক্ষই বারবার বিপজ্জনক ফাউল করে উত্তেজনা ছড়ায়। পায়ের পেশির আঘাতে এ ম্যাচে ছিলেন না কিংসের আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ সেনানি রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো, তাতে শুরুর একাদশে ফেরেন মতিন মিয়া। করোনা থেকে সদ্য সেরে ওঠা খালিদ শাফিইয়ের বদলে রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব ওঠে কাজী তারিক রায়হানের কাঁধে।

আক্রমণাত্মক খেলা কিংস সুযোগ তৈরি করে তৃতীয় মিনিটেই। এমেরি বাইসেঙ্গের বাধা এড়িয়ে বাইলাইন ধরে আক্রমণে ওঠেন নুহা মারোং। কিন্তু গাম্বিয়ার এই ফরোয়ার্ড বক্সে ঢুকে শট নেওয়ার আগেই বিপদমুক্ত করেন বাইসেঙ্গে। ম্যাচের ষোড়শ মিনিটে আনিসুর রহমান জিকোর দারুণ সেভে বেঁচে যায় কিংস। বাইসেঙ্গের ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে লাগার পর বক্সের ভেতরে পেয়ে যান মারাজ হোসেন। শরীর ঘুরিয়ে এই মিডফিল্ডারের নেওয়া সাইড ভলি ফেরান জিকো; এরপর এমফন উদোহর ফিরতি শটও ঝাঁপিয়ে আটকান তিনি।

কিংস প্রথম ভালো সুযোগটি তৈরি করে ২৩তম মিনিটে। তৌহিদুল আলম সবুজের ব্যাক পাস ধরে একটু এগিয়ে বাঁ পায়ে জোরাল শট নেন মিগেল ফিগেইরা দামাশেনো। বল গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেনকে ফাঁকি দিয়ে ক্রসবার কাঁপায়। ২৭তম মিনিটে নিজেদের ভুলে গোল হজম করতে বসেছিল সাইফ স্পোর্টিং। নিজেদের অর্ধে সবুজ হোসেন বল হারালে পেয়ে যান মিগেল; একটু এগিয়ে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার পাস দেন ডান দিকে থাকা মারোংকে। তার দুর্বল কোনাকুনি শট পাপ্পু আটকে দেন।

পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় কিংস। মিগেলের নিচু পাস একজনের গায়ে লেগে চলে যায় বক্সে মতিনের পায়ে। একটু সময় নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় লক্ষ্যভেদ করেন জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড। ৩৪তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। কিন্তু সবুজের পাস মারোং বুক দিয়ে নামিয়ে দেন মতিনকে। কিন্তু শুরুতে সময়ক্ষেপন করে এবং পরে তালগোল পাকিয়ে শটই নিতে পারেননি তিনি।

এর তিন মিনিট পরই ইয়াসিন আরাফাতের অপ্রয়োজনীয় আরেকটি ফাউলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় কিংস। নবম মিনিটে রহিম উদ্দিনকে মাঝমাঠে অহেতুক ফাউল করে প্রথম হলুদ কার্ডটি দেখেছিলেন ইয়াসিন আরাফাত; দ্বিতীয়টিও দেখেন সেই রহিমকেই অকারণ ফাউল করে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রক্ষণের শক্তি বাড়াতে ফরোয়ার্ড সবুজকে তুলে ডিফেন্ডার শাফিইকে নামান অস্কার ব্রুসন। এ অর্ধে আক্রমণের চেয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ পায়ে রাখার দিকেই মনোযোগী ছিল কিংস। এরই মধ্যে ৬৮তম মিনিটে ভালো সুযোগ পায় তারা। কিন্তু ওয়ান-অন-ওয়ানে গোলরক্ষকে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি মারোং। তিনি হেড নেওয়ার আগেই অনেকটা লাফিয়ে ক্লিয়ার করেন পাপ্পু।

৭৫তম মিনিটে মারাজের দূরপাল্লার শট গ্লাভসের ছোঁয়ায় ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন জিকো। একটু পর মারাজের আরেকটি শট পাঞ্চ করে আটকান তিনি। ৮১তম মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে কোনাকুনি শটে বিপলু আহমেদ লক্ষ্যভেদ করলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় ব্রুসনের দলের।

SOURCE : দৈনিক ইত্তেফাক