সমাজের স্পেশাল চিলড্রেন তথা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাতে নানা আয়োজনে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বসুন্ধরা গ্রুপের স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের খেলার মাঠ প্রাঙ্গণে এই ফাউন্ডেশন আয়োজন করে এক উৎসব মুখর অনুষ্ঠানের।
“এসো মিলি সবে প্রাণের উৎসবে” শীর্ষক ওই অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান এবং বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ও বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইয়াশা সোবহান।
এছাড়া ফাউন্ডেশনের প্রধান শিক্ষক শায়লা শারমিন এবং ইনচার্জ মেজর মোহসিনুল করিম, ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন পাভেল, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেলসহ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং অন্যান্য অতিথিরাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিক্ষার্থীর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত এবং দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সমাবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা। এই পরিবেশনা সমাজের সেই ভুল ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা বোঝা নয়; বরং তারা সমাজের আলোকবর্তিকা।
অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রধান শিক্ষক শায়লা শারমিন। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪০০ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন থেকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিশেষ শিক্ষার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রম, বিভিন্ন থেরাপি সেবা এবং চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রহণ করছে। বর্তমানে আমাদের এখানে ৮০ জন শিক্ষার্থী জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের আওতায় প্রি-প্রাইমারি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করছে। শিক্ষার্থীদের সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যেখান থেকে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে তিনজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে এবং এরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী গ্রামে গবাদি পশু পালন ও সেলাইয়ের কাজ করে স্বনির্ভর জীবনযাপন করছে। তাছাড়া প্রায় ১০০ এর বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে এখানে আশেপাশে কয়েক বছর বাসা ভাড়া থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে গেছে। আজকের অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতির আয়োজনে আমাদের ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।
শায়লা আরও বলেন, মহান আল্লাহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের যেমন বিশেষ চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনি তার সৃষ্টির ভারসাম্য রাখতে সৃষ্টি করেছেন মানবতার অগ্রদূত মহিয়সী ইয়াশা সোবহানের মতো মানুষদের। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়াশা সোবহানের ছত্রছায়ায় মায়ের আদরে বেড়ে উঠছে এই শিশুগুলো। যিনি প্রতিনিয়ত আমাকেসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন মায়ের মতো করে আদর-যত্ন করে এদের শিক্ষা দিতে। শুধু ইয়াশা সোবহানই নন, ওনার সন্তানেরাও এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মেনে নিয়েছেন আপন ভাই-বোনের মতো। তাদের এই ভালোবাসা নিশ্চিত করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব শিশুরা কখনো অভিভাবক শূন্য হবে না।
বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের ইনচার্জ মেজর মোহসিনুল করিম বলেন, আমরা এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যেসব পরিবারকে সহযোগিতা করছি, তারা সমাজের নিম্নশ্রেণির। যাদের অনেকের বাড়ি-ঘরও নেই। আমরা এখানে অনেক শিশুকে রাস্তা থেকে নিয়ে এসেছি। যাদের বোঝা মনে করে বাবা-মা ভিক্ষাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল। আমরা এখানে নিয়ে এসে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব শিশুকে স্বাবলম্বী করেছি। তারা এখন নিজে নিজে টয়লেটে যেতে পারে, ঘর গোছাতে পারে, বাজার করতে পারে, বাবা-মাকে সাপোর্ট দিতে পারে। এমন বাচ্চা আমাদের এখানে আছে যারা কখনো মা ডাকটিও দিতে পারতো না। আমরা তাদের মা ডাক শিখিয়েছি। এসব আমরা করতে পেরেছি আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইয়াশা সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের স্বদিচ্ছা ও সহযোগিতায়।
বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ও বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইয়াশা সোবহান বলেন, বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন ২০১৭ সালের ১ মার্চ যাত্রা শুরু করে মাত্র চারজন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে। বর্তমানে এখানে ৪৫০ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু লেখাপড়া করছে। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের কাজ নিজে করা, গান, নাচ, সেলাই মেশিনের কাজসহ নানা প্রয়োজনীয় কাজ তারা শিখছে।
এ সময় তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানসহ অন্যান্যদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, চেয়ারম্যান স্যার বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের জন্য তিনটি ৬ তলা বিল্ডিং এবং ৩টি স্কুল বাসসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তিনি কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রজেক্টে ৫ বিঘা জমির ওপরে ১ লাখ স্কয়ার ফিটের ৭তলা বিল্ডিং এবং এক হাজার জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ একটি স্কুল বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনকে উপহার দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে একটি হৃদয়স্পর্শী অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের অসাধারণ যাত্রা এবং কীভাবে তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জীবনে পরিবর্তন আনতে নিরলস কাজ করছে সেটি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে করেন। তারা জানান, কীভাবে বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন তাদের সন্তানদের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নাচ, গান ও নাটকের মাধ্যমে নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতা তুলে ধরে বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনে পড়াশোনা করা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল আনন্দময় কেক কাটার পর্ব এবং রংপুর রাইডার্স দলের সঙ্গে একটি বিশেষ সেশন, যা শিশুদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন সমাজে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে চলেছে। এই উদ্যোগ শিশুদের আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ করছে এবং সমাজকে এক নতুন আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
SOURCE : Banglanews24৬০ জন দরিদ্র মহিলাকে সেলাই মেশিন দান করলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Donates Sewing Machines to 60 Poor Women in Bancharampur
বসুন্ধরা গ্রুপ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখছে
Bashundhara Group Keeps Underprivileged Students' Dreams Alive
শায়েস্তাগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
Bashundhara Shuvosangho Distributed Food Items Among Underprivileged People in Shayestaganj
আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’ আসরের সমাপনী
"Qur'an-er Noor - Powered by Bashundhara" Int'l Hifzul Qur'an Competition Closing Ceremony is Held
সৈয়দপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই মেশিন পেলেন অসচ্ছল ২০ নারী
20 Poor Women in Syedpur Receive Sewing Machines from Bashundhara Shuvosangho