মিনহাজুল আবেদীন ও তৌহিদুর রহমান দুই ভাই। শেরপুরের এক কুঁড়েঘরে কোনোমতে দিন কাটে তাদের। অসহায় পরিবারে জীবিকার চাকা ঘোরে না। তাই দুই ভাই রিকশা চালিয়ে সচল রেখেছে সংসার।
রিকশা চালানোর ফাঁকে যেটুকু সময় পায়, তাতেই বাজিমাত করেছে। এসএসসিতে পেয়েছে জিপিএ ৫। রিকশা চালিয়েও ভালো ফল করায় প্রশংসা কুড়িয়েছে তারা। তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তিও হার মানে দরিদ্রতার কাছে। তাদের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। এ অবস্থায় তাদের পাশে সহায় হয়েছেন দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) নিজের জন্মদিনে দুই ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন এককালীন শিক্ষাবৃত্তি।
শুধু এই দুই ভাই নয়, দেশের এমন ভাগ্যহত ১০৪ জন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষা সহায়তায় পাশে দাঁড়িয়েছেন সায়েম সোবহান আনভীর। আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ শুভসংঘের আয়োজনে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এসব শিক্ষার্থীর মাঝে এককালীন নগদ অর্থ তুলে দেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, নিউজটোয়েন্টিফোর ও রেডিও ক্যাপিটালের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বাংলানিউজ২৪-এর সম্পাদক জুয়েল মাজহার, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, কালের কণ্ঠের উপ-সম্পাদক ও শুভসংঘের উপদেষ্টা হায়দার আলী, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদেকুল ইসলাম এবং পরিচালক জাকারিয়া জামান।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'শিক্ষাটাই একমাত্র নিজের; যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। শিক্ষা থেকেই মানুষের প্রজ্ঞা তৈরি হয়। যে প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এমনভাবে তোমাদেরকে বড় হতে হবে, যাতে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত হতে পারো। তবেই তোমাদের পাশে থাকা সার্থকতা পাবে। '
এ সময় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের একত্র করার চেষ্টা করেছি। যাদের কেউ এতিম, কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠেছে। পরে বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর সাহেবকে জানালাম, এসব ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব শুভসংঘ থেকে আমরা নিতে চাই। আমরা তাদের ভর্তি করাব, তাদের বই-খাতার ব্যবস্থা করব, তাদের ঢাকায় আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাসহ জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করে দেব, প্রতি মাসে এসব শিক্ষার্থীকে দুই হাজার টাকা করে বৃত্তি দিতে চাই। তিনি (বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) তখন জানতে চান, কতজনের ব্যবস্থা করতে চাই আমরা। আমি ১০০ জনের কথা জানালে তিনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেন। আজকে সেই দিন, যেদিন ১০৪ জন শিক্ষার্থীকে নগদ ২৫ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ' তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এই আয়োজন করব। এরপর এইচএসসি লেভেলের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াব। ’
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার ১০৪ জন অদম্য মেধাবীর মাঝে শিক্ষাবৃত্তি তুলে দেবেন সায়েম সোবহান আনভীর। নিজের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নেন তিনি। শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার প্রতিটি ধাপে তিনি পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করে দুই ভাই মিনহাজুল ও তৌহিদুর। শেরপুরে বাড়ি হলেও টঙ্গীতে রিকশা চালায় দুই ভাই। বাবা মোশারফ হোসেন পাঁচ বছর আগে ব্যবসায় বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়েন। সেই থেকে পড়ে যাওয়া সংসারের ঘানি টানছে দুই ভাই।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দুই বোন জিম আফরোজ ও মিম আফরোজ। পিতা শফিকুল ইসলাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। অভাবের সংসারে দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারছিলেন না। কিন্তু দুই অদম্য মেধাবী ঘোষ নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জন করায় হাসি ফোটে পরিবারে। শফিকুলের মনে জেগে ওঠে দুই মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার আশা। তাতে বাধ সাধে দরিদ্রতা। দুই বোনের উচ্চশিক্ষার পথ মসৃণ করতে পাশে দাঁড়ালেন সায়েম সোবহান আনভীর।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আলীনগর গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম। একাধিক বিয়ে করে সংসার ছেড়ে চলে যান রিয়াজুলের বাবা নাছির মিয়া। সংসার আর লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ছোটবেলা থেকেই কৃষিশ্রমিকের কাজ শুরু করে রিয়াজুল। এত কষ্টের মাঝেও দমে যায়নি সে। শত বাধা পেরিয়ে হক সাহেব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করে রিয়াজুল। হাওরের এই অদম্য সংগ্রামীর উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে পাশে দাঁড়িয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি।
সংসারের বড় মেয়ে জন্মের পরই দেখেছেন বাবার চলতে না পারার কষ্ট (প্রতিবন্ধী)। নিজে হাঁটতে শিখলেও দেখেছেন বাবার অসহায়ভাবে থেমে থাকা। দেখেন অভাবের সংসার চলে প্রতিবন্ধী বাবার অটোরিকশার আয়ে। এত কিছুর মধ্যেই টানাপড়েনের সংসারে সম্প্রতি নরসিংদীর খিরাটি এ কে হাই স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মোসা. নিলয়। পরিবারের চার বোনের মধ্যে নিলয় বড় হওয়ায় পরিবার নিয়ে ভাবনাটাও বেশি। নিলয়ের শিক্ষাজীবন সহজ করতে পাশে দাঁড়িয়েছন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
বাবা মো. ফরহাদ মিয়ার স্বপ্ন- তার চার মেয়েই উচ্চশিক্ষিত হয়ে করবেন সম্মানজনক কোনো চাকরি। সেই চিন্তা থেকে কষ্ট করে সংসার চালালেও মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। অটোরিকশা চালিয়ে আয় দিয়ে যেখানে সংসার চালানোই কঠিন, এমন পরিস্থিতিতে চার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় ফরহাদ মিয়াকে।
তিনি বলেন, 'আমার বড় মাইয়াটা অন্য বোনদের কথা চিন্তা করতে গিয়ে পড়াশোনায় আগাইতে পারে নাই। তার ছোটজন গত বছর পাস (এসএসসি) করলেও নিলয় এ বছর পাস করেছে। আমার এক মাইয়ার (নিলয়) পড়াশোনা নিয়া আমার আর চিন্তা নাই। বসুন্ধরার মতো এত বড় গ্রুপ আমার মাইয়ার পাশে দাঁড়াইছে। এর চেয়ে আর বড় পাওয়া কী হইতে পারে। এমডি (বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর) সাহেবকে আল্লাহ আরো ভালো কাজ করার তাওফিক দিন। আমি আমার বাকি মাইয়াগুলারেও লেখাপড়া করাইতে চাই। তারা যেন ভালা মানুষ হইতে পারে। '
মোসা. নিলয় বলেন, 'বাবার চলতে না পারা আমাদের কখনো থামাতে পারেনি। বাবার প্রতিবন্ধকতা আমার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। আমি সফলতার সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করতে চাই। বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞতা। '
হবিগঞ্জের সিকন্দরপুরের মেয়ে মুক্তা আক্তার। সম্প্রতি জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করা মুক্তা শিক্ষাজীবনের আরেকটি ধাপ পার করে ভর্তি হয়েছেন কলেজে। শিক্ষাজীবন শেষ করে হতে চান একজন আইনজীবী। পাশে থাকতে চান সত্যের পথে। গল্পটা সাধারণ মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে অনেক কষ্ট আর সাহসের গল্প। যার একটি বড় উদাহরণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া মুক্তা আক্তারের পৃথিবীতে ডান হাতের একাংশ ছাড়া আগমন। বাঁ হাতই তার শক্তি। সেই শক্তি আরো বাড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
নানাবাড়িতে বেড়ে ওঠা মুক্তা মায়ের কাছেই এগিয়ে যেতে শিখেছে। মা খালেদা বেগম তাকে শিখিয়েছেন কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়। শিশু বয়স থেকেই পারিবারিক কারণে বাবার কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে তাকে। তবু থেমে থাকেনি। সিকন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়, এরপর বসন্ত কুমারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় সে।
মুক্তা আক্তার বলেন, 'বসুন্ধরা গ্রুপের বৃত্তি পেয়ে সামনের পথ সহজ হবে আশা করছি। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাব। '
কসবায় বসুন্ধরার সহায়তায় চক্ষু চিকিৎসা পেল ৫০০ রোগী
500 Patients Receive Eye Treatment in Kasba with Bashundhara Group’s Support
৬০ জন দরিদ্র মহিলাকে সেলাই মেশিন দান করলো বসুন্ধরা শুভসংঘ
Bashundhara Shuvosangho Donates Sewing Machines to 60 Poor Women in Bancharampur
বসুন্ধরা গ্রুপ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখছে
Bashundhara Group Keeps Underprivileged Students' Dreams Alive
শায়েস্তাগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
Bashundhara Shuvosangho Distributed Food Items Among Underprivileged People in Shayestaganj
আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’ আসরের সমাপনী
"Qur'an-er Noor - Powered by Bashundhara" Int'l Hifzul Qur'an Competition Closing Ceremony is Held