All news

বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন

বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন

দেশের চাহিদার ৯০ শতাংশ বিটুমিন আসে বিদেশ থেকে। এবার এ আমদানিনির্ভরতা শেষ হতে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে বিশাল কারখানায় ‘রোড টু দ্য ফিউচার’ স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট। এটি দেশের প্রথম বেসরকারি বিটুমিন প্লান্ট।

প্রধান অতিথি হিসেবে কারখানা উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও তাঁর ছেলে ওয়ালিদ সোবহান। এ ছাড়া গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন সেক্টরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লেজার শোসহ ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। দশ হাজারেরও বেশি লোক সমাগমের পুরো অনুষ্ঠানটি মনিটরিং করা হয় ড্রোনের মাধ্যমে। অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।

উদ্বোধনের পরপরই উৎপাদন শুরু করে প্লান্টটি। পরিশোধিত ক্রুড অয়েলের উপজাত থেকে তৈরি বিটুমিন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি অভ্যন্তরীণভাবে ৭০ হাজার মেট্রিক টন বিটুমিন উৎপাদন করে। দেশে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় পাঁচ লাখ টন। বাকিটা আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।

কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করা বিটুমিন ব্যবহার করে নির্মিত সড়ক টেকসই হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট এককভাবে বছরে সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন বিটুমিন ও পিচ উৎপাদন করতে পারবে। ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করবে। আর রপ্তানিতে আসবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত আপনাদের সঙ্গে একত্র হতে পেরেছি। আর এর পেছনে মূল কাজটি করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের এ উদ্যোগের কারণে আমি এখানে আসতে পেরেছি। পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নেওয়াসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশে অবদান রাখছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’

বিটুমিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করতেন উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিটুমিন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু সমাধান খুঁজে পাইনি। আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে মেলে এমন বিটুমিন আমরা পাইনি। বলা হতো, এগুলো আমদানির পর গুণগত মান ঠিক থাকত না। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের বিটুমিন নষ্ট হয়ে যেত। যেসব বিটুমিন ব্যবহার করে রাস্তা তৈরি করতাম সেগুলো টেকসই হতো না। প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বা বাইরে সব জায়গায় আক্ষেপ করতেন, আমাদের রাস্তাগুলো কবে বিদেশের রাস্তার মতো হবে? আমাদের বলা হতো, এখানে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে বিটুমিনের মান ঠিক থাকে না। সে কারণে কখনো এগুলোকে আমরা আমাদের মতো করে ব্যবহার করতে পারিনি। আজ আমরা আনন্দিত। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের সে সুযোগটি করে দিচ্ছে। বসুন্ধরার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এখন আর বাইরে থেকে বিটুমিন আমদানি করতে হবে না। আমাদের চাহিদা মেটাতে দেশেই বিটুমিন পাব। চাহিদা মেটানোর পরে তাদের স্বপ্ন রপ্তানি করার। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন বলে বিশ্বাস করি।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এখানে আসার আগে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার আলাপ হচ্ছিল। আমি উনাকে বলেছি একটা বড় কারখানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেন তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তিনি (বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান) আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এমন একটা কারখানা গড়ে তোলা হবে। এটি আমাদের জন্য বড় সুসংবাদ।’

এর আগে কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ পোস্তগোলা সেতুর টোল সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি ৩০ বছরের পুরনো সেতুটিকে টোলমুক্ত করার দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টোলের ব্যাপারটি আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাব। তিনি নিশ্চয় আপনাদের সঙ্গে একমত হবেন। আগামী ছয় মাস বা তার কিছুদিন পর টোলের ব্যাপারটি মীমাংসা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর উপভোগ্য লেজার শো প্রদর্শন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি খাতের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট’ মূর্ত হয়ে ওঠে।

অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বসুন্ধরা গ্রুপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। এই বছরটি গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি আমরা। এই মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ভাষার মাস। এই চমৎকার সময় এবং মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বেসরকারি খাত এগিয়ে যাচ্ছে। তিল তিল করে বেসরকারি খাতে একেকটি শিল্প যোগ হচ্ছে। আর এর মানে হলো, হাজারো লোকের কর্মসংস্থান হওয়া, হাজারো পরিবারকে রক্ষা করা। আর এটিই হলো, সোনার বাংলা।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছেন। সেই স্বপ্ন পূরণে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান দিতে দেশে যাঁরা এগিয়ে এসেছেন তাঁদের সম্মুখ ভাগে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রশংসা করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘সোবহান সাহেবের ছেলে আনভীর বিদেশ থেকে ফেরত এসে বাবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে, বাবার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন করার জন্য রাত-দিন খেটে যাচ্ছেন। উনাদের তো টাকার অভাব নেই। তার পরও কেন করেন? কেন তাঁরা নতুন নতুন শিল্প গড়েন? কারণ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা।’ এ সময় তিনি জানান, কেরানীগঞ্জে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলও হবে বসুন্ধরা গ্রুপের হাত ধরে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপ অন্তত ৩০টি শিল্পকারখানা করেছে। বিশাল দুটি হাউজিং করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের একটি বৈশিষ্ট্য, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু নিজের জন্য করে না।’ হুন্ডি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্তে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে। ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্তে রেমিট্যান্স ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আমি তাঁদের আরেকটি অনুরোধ করব। আপনারা হুন্ডি বন্ধ করেন। বর্তমানের তুলনায় রেমিট্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এ দেশে প্রতি মাসে তিন বিলিয়ন ডলার আসবে।’ এ সময় তিনি শেখ রাসেলের নামে ক্রিকেট একাডেমি করার ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, মুজিববর্ষের প্রাক্কালে কারখানা উদ্বোধন বিরাট ব্যাপার। সবচেয়ে বড় কথা—কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের চাহিদার ৯০ শতাংশ বিটুমিন আসে বিদেশ থেকে। বসুন্ধরা গ্রুপ এটা পূরণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। কেরানীগঞ্জের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এই বিটুমিন প্রকল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ঢাকাকে চাপমুক্ত করতে হলে কেরানীগঞ্জের উন্নয়ন করতে হবে।

SOURCE : কালের কণ্ঠ