All news

উদ্বোধন হলো করোনা চিকিৎসায় দেশের সর্ববৃহৎ বসুন্ধরার হাসপাতাল

উদ্বোধন হলো করোনা চিকিৎসায় দেশের সর্ববৃহৎ বসুন্ধরার হাসপাতাল

কভিড-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অস্থায়ীভাবে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় দুই হাজার ১৩ শয্যার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালটি উদ্বোধন করেছেন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।

আজ রবিবার দুপুরে এ হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ও টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ'র সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. সাজ্জাদ হায়দার।

আজ রবিবার দুপুরে বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির ওই হাসপাতালটি উদ্বোধনকালে মন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দু'একদিনের মধেই এখানে কভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তি শুরু হবে। এখানে আইসোলেশনের অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম রয়েছে। রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স। তাই সহজেই এখানে কভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বা রোগীদেরকে আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হবে।

মন্ত্রী জানান, প্রথমে ৫০০ শয্যা চালু করা হবে পরে আরো ৫০০ শয্যা এবং এর পর আরো ৫০০ বা এক হাজার শয্যায় রোগী ভর্তি করে হাসপাতলটির কার্যক্রম চলমান রাখা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্টানে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় আমরা দেশের সবচেয়ে বড় এই কভিড হাসপাতালটি সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছি। তারা যতদিন চাইবে ততদিনই ব্যবহার করতে পারবে।

করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে আমরা দেশের মানুষের জন্য যতটুকু দরকার করেছি। আপনারা যে যেভাবে পারেন, বাংলাদেশকে বাঁচান। 
সায়েম সোবহান আনভীর আরো বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের চিকিৎসায় শুধু সরকারের উদ্যোগই নয়, দেশের প্রধান বেসরকারি শিল্প-উদ্যোক্তাদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। মানুষের প্রতি সেই দায়বোধ থেকেই এগিয়ে এসেছি। তিনি এ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জন্য ২০০ বেড রিজার্ভ রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

পরে মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকরাও করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইনের ফাইটার। তাদের বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের মধ্যে আছে। আমরা সব হাসপাতালেই সাংবাদিক, পুলিশসহ যারা ফ্রন্ট ফাইটার তাদের বিষয়টি অতিব গুরুত্বের সাথে নেবো। 

অনুষ্ঠানে আরো উ্পস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার সরোয়ারসহ মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে রোজই আমাদের কথা হয়। তিনি দেশবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কার্যক্রম তদারকি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দেশবাসীর জন্য যখনই যা চেয়েছি প্রধানমন্ত্রী দ্রুততার সাথে তাই দিয়েছেন। যার কারণে এখনও আমরা কঠিন ভাইরাস করোনা মোকাবেলা করে যাচ্ছি। আমরা গত ফেব্রুয়ারি থেকে করোনা মোকাবেলায় কাজ শুরু করি। সে সময় টেস্টের জন্য কোনো কিট ছিল না, আইসডিডিআর-এ একটিমাত্র টেস্টিং ল্যাব ছিল। এখন সেখানে আমরা ৪০টি টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্টা করেছি। আরো ১৫টি ল্যাব শিগগিরই চালু হবে। 

মন্ত্রী জানান, আমরা পরে টেস্টিং কিট এনেছি। ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। আগে যেখানে একদিনে মাত্র ১৫০ জনের টেস্ট হতো সেখানে এখন আমরা দৈনিক সাড়ে আট হাজারের মতো টেস্ট করছি। এটি শিগগিরই দশ হাজারে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, বসুন্ধরা হাসপাতালটি ২০১৩ শয্যা বিশিষ্ট। এটিতে আইসোলেশনের সব সরঞ্জাম যথেষ্ঠ রয়েছে। এখানে অক্সিজেনের ফ্যসিলিটিসহ আরো ৭১টি বেড রয়েছে।  সব মিলিয়ে বসুন্ধরা হাসপাতালটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টার বা করোনা হাসপাতাল। 

মন্ত্রী বলেন, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমরা করোনা রোগীদের সহায়তার জন্য দুই হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। যেটা ইতিহাসে বিরল। এই কাজ অন্যসময় করলে সময় লাগতো কমপক্ষে ৬ মাস। সেখানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় মাত্র পনের দিনে করতে পেরেছি। একটি বিষয় খুবই খারাপ লাগছে, তা হলো এখনো দেশের জনগণ এই রোগ নিয়ে তেমন সচেতন নয়। যার কারণে ফেরিঘাটে, লঞ্চঘাটে, চায়ের স্টলে রাস্তাঘাটে অনেক লোক সমাগম দেখা যায়। আমরা অনুরোধ করবো যারা এই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কাজটি করছেন তারা যেন আরো কঠোরভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণকরেন। কারণ যে ভাইরাসকে আমরা দেখতে পাই না, তার আচরণ আমরা বুঝতে পারি না, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই মানতে হবে। মুখে মাস্ক পড়তে হবে এবং হাত ধোয়া বা হাতে স্যানিটাইজার লাগাতে হবে। 

স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামও এত বড় একটি হাসপাতাল কম সময়ের মধ্যে তৈরির জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চীন তাদের উহান প্রদেশে মাত্র এক সপ্তাহে শুনেছি এক হাজার বেডের হসপিটাল করেছে। এশিয়ার মধ্যে তথা বিশ্বে বাংলাদেশের বসুন্ধরা গ্রুপও মাত্র তিন সপ্তাহে দুই হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিল। তিনি বলেন, এই হাসপাতালটির মধ্য দিয়ে আমরা কভিড আক্রান্ত রোগীদেরকে উপযুক্ত কেয়ার দিতে পারবো। 

উল্লেখ্য, দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াতে রোগ মেকাবেলায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরাগ্রুপ ও দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাত্র ২১ দিনে আড়াই লক্ষ বর্গফুট জায়গায় প্রস্তুত করে ফেলে ২ হাজার ১৩ বেডের অস্থায়ী হাসপাতাল। এটি কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অবস্থিত।

গত ১২ এপ্রিল থেকে নির্মাণ শুরু করে তিন সপ্তাহেই করোনা রোগীদের সবচেয়ে ভালোমানের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয় এই অস্থায়ী হাসপাতালটি। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড ২ হাজার ১৩টি। ছয়টি ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসেছে। এছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকছে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে ৭১ বেডের আইসিইউ থাকছে।  এখানে থাকছে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থাও। 

‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’ এই শ্লোগানের আলোয় পথচলা বসুন্ধরা গ্রুপ করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। দেশের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর একটি দল প্রস্তাবিত এলাকা দেখে ও পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপকে দেশের দুর্যোগে বিশাল সাপোর্ট নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়।

SOURCE : কালের কণ্ঠ