All news

জুয়েলারি খাতে বিপ্লব আনবে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ

স্বর্ণের রপ্তানিতে সম্ভাবনা রয়েছে- সায়েম সোবহান আনভীর

জুয়েলারি খাতে বিপ্লব আনবে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ। বসুন্ধরা গ্রুপ যে গোল্ড রিফাইনারি নিয়ে আসছে, তাতে দেশের জুয়েলারি ব্যবসার আরো প্রসার ঘটবে। আমাদের বাজার অনেক বড় হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি হবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং ১১ জন ব্যক্তিকে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ, বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড ও আরিশা জুয়েলার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘ভারত ২৬ বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি রপ্তানি করে। আমরা কেন রপ্তানি করতে পারব না। ভবিষ্যতে জুয়েলারি খাত অগ্রাধিকার শিল্প হিসেবে এগিয়ে যাবে। দেশে উৎপাদন করে রপ্তানি করে জিডিপিতে অবদান রাখবে। এটা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’ বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই সোনার গয়না মানুষের কাছে মূল্যবান সম্পদ। অনেকের কাছে আভিজাত্যের অংশ। ধনী বা গরিব কম-বেশি আমরা সবাই ব্যবহার করি সোনার গয়না। বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে সোনার অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। এই শিল্পে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি হয়। বিশ্বে হাতে তৈরি সোনার গয়নার প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রস্তুত হয়। কিন্তু সোনার গয়না রপ্তানিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। অথচ রপ্তানিতে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা।’ বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডের এই কর্ণধার বলেন, বিশ্ববাজারে হাতে তৈরি সোনার গয়নার কদর বাড়ছে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও কানাডার মতো উন্নত দেশে বাংলাদেশি গয়না রপ্তানির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি কারিগরদের হাতে তৈরি গয়না রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রয়োজন নতুন নতুন উদ্যোগ। পাশাপাশি সোনার গয়না রপ্তানিতে সরকারের নীতি সহায়তাও প্রয়োজন। সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার নিবন্ধিত জুয়েলারি ব্যবসায়ী আছেন। এখন জুয়েলারি শিল্প গড়ে ওঠা উচিত। বিদেশে আমাদের পোশাকশিল্পের যেমন সুনাম, তেমনি জুয়েলারি শিল্পেও সুনাম অর্জন করতে হবে। পোশাকশিল্পের চেয়ে সোনার গয়না তৈরিতে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি সম্ভব।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সহসভাপতি আমিন হেলালী, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। স্বাগত বক্তব্য দেন বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এফবিসিসিআই সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, ‘আমি মনে করি, জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড।’ রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনেক বেশি প্রত্যাশা। স্বর্ণ ব্যবসার প্রসারে নতুন কমিটি এসে এ খাতের সব ধরনের সমস্যা দূর করবে বলে আশা করি।’ বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বর্ণ নীতিমালা। যাঁরা স্বর্ণ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে বিগত সময় থেকে আজ পর্যন্ত অবদান রেখেছেন তাঁদের জন্য আমরা এই সম্মাননার আয়োজন করেছি।’ বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ রায় বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর আগামী কমিটির দায়িত্ব নিয়ে জুয়েলারি মালিক সমিতির অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবেন বলে আমি আশা করি। আমরা আগামীতে আর স্বর্ণের বার আমদানি করব না। বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডে তৈরি হবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা বার। সেটা আমরা রপ্তানি করব।” বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান আজাদ বলেন, ‘আগামী কমিটি জুয়েলারি ব্যবসা সম্প্রসারণে ভ্যাট-ট্যাক্স সম্পর্কিত জটিলতাগুলো দূর করবে বলে আশা করছি।’ বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে প্রথম এবং একমাত্র গোল্ড রিফাইনারি ‘বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড’ করার সাহস দেখানোর জন্য সায়েম সোবহান আনভীরকে ধন্যবাদ। এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ায় জুয়েলারি শিল্পের বিপ্লব ঘটবে। ওই অনুষ্ঠানে সায়েম সোবহান আনভীরের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান দোলন। বাজুস সম্মাননা পাওয়া তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘ, ঢাকা গোল্ড লিমিটেড ও বাংলা গোল্ড (প্রা.) লিমিটেড। আর জুয়েলারি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাজুস সম্মাননা পাওয়া ১১ জন হলেন, আলী আকবর খান (মরণোত্তর), এ জেড এম ছানাউল্লা (মরণোত্তর), শামসুল আলম (মরণোত্তর), এম এ হান্নান আজাদ, দিলদার আহমেদ সেলিম, ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, এম এ ওয়াদুদ খান, ডা. দিলীপ কুমার রায়, কাজী সিরাজুল ইসলাম ও গঙ্গা চরণ মালাকার।

SOURCE : কালের কণ্ঠ