করোনাকালে যখন বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ ছিল কিংবা চিকিৎসাসেবা সীমিত করা হয়েছিল, ওই সময়টায় ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করেছে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সব ধরনের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার আট বছরের মধ্যে হাসপাতালটি কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোয় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গরিব ও প্রান্তিক রোগীদের চিকিৎসা, গর্ভবতী মায়েদের সেবা, শিশু বিভাগ এবং জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় ৩৫০ শয্যার সাততলা ভবনে এই হাসপাতাল। ২০১২ সাল থেকে কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের জেলার রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হাসপাতালটি। করোনাকালীন যখন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ ছিল ওই সময়টায় লক্ষাধিক রোগীর চিকিৎসাসেবা দিয়েছে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনার আট মাসে এই হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে তিন হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রসূতিদের নরমাল ডেলিভারিসহ সিজারিয়ান ডেলিভারি, চোখের অপারেশন, ইএনটি, গাইনি ও অর্থোপেডিক অপারেশন হয়েছে বেশি। এই সময়ে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ৮১ হাজার ৮৩৪ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫২৪ জন শিশু, চার হাজার ৬৩৩ জন নারীকে গাইনি চিকিৎসা, ১২ হাজার ৫৯৬ জন নারীকে প্রেগনেন্সি চিকিৎসা, ছয় হাজার ৫৭২ জন রোগীকে অর্থোপেডিক চিকিৎসা, ৯ হাজার ৯২৮ জন রোগীকে মেডিসিন চিকিৎসাসহ অন্য বিভাগগুলোতেও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, চক্ষু বিভাগের প্রধান ফ্যাকো সার্জন ডা. রুহুল আমিন বলেন, ‘এই হাসপাতালে রোগী-চিকিৎসকের মধ্যে বৈষম্য না রেখে, রোগীদের সঙ্গে আন্তরিক হয়ে সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। চিকিৎসক-রোগী বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার নিয়ে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কাজ করছে। সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষ, মা ও শিশু, জেনারেল, সার্জারি, চক্ষু রোগীদের সেবায় ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আট বছরে হাসপাতালটি কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের জেলায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গরিব ও প্রান্তিক রোগীদের চিকিৎসা দেয়। গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসাসেবা, শিশু বিভাগ এবং জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। হাসপতালের ষষ্ঠ তলায় রয়েছে রোগীদের জন্য তিন ক্যাটাগরির কেবিন। খাবারসহ এসব কেবিনের প্রতিদিনের ভাড়া ৮০০, এক হাজার ২০০ ও এক হাজার ৫০০ টাকা। আর সাধারণ রোগীদের জন্য রয়েছে সাধারণ বেড। খাবারসহ যেগুলোর প্রতিদিনের ভাড়া ৩৫০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘রয়েছে শিশুদের টিকা দিতে টিকাদান কেন্দ্র (ইপিআই)। সার্বক্ষণিক সেবাদানকারীরা মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করে সপ্তাহে ছয় দিন টিকা দেন। হাসপাতালটির উপব্যবস্থাপক মো. সিদ্দিকুর রহমান সুমন জানান, ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মা ও শিশু, চক্ষু, জেনারেল এবং জরুরি বিভাগ দিয়ে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু। বর্তমানে এই হাসপাতালে মেডিসিন, গাইনি, ডেন্টাল, সার্জারি, চর্ম ও যৌন, অর্থপেডিক্স, প্লাস্টিক সার্জারি ও ডায়াবেটিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঠোঁট কাটা, তালু কাটা, আগুনে পোড়া রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে এই হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক রোগীদের চোখের ফ্যাকো অপারেশন করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়াই বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল লক্ষ্য। এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে পাঁচ হাজারের বেশি সুবিধাবঞ্চিত রোগীর চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে। এ ছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের প্রসূতি মায়েদের সিজার করাতে এই হাসপাতালে থাকা-খাওয়া, ওষুধসহ মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা লাগে। হাসপাতালের পরিবেশ, খরচ এবং অন্যান্য সুবিধার কারণে বর্তমানে গরিব রোগীর পাশাপাশি ধনী রোগীরাও আসছে চিকিৎসাসেবা নিতে। গত বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার আলমপুর এলাকার রাহেলা বেগম জানান, বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি তাঁর ছয় মাস বয়সের শিশুসন্তানকে জ্বর ও ঠাণ্ডার চিকিৎসা করাতে এসেছেন। হাসপাতালটির চিকিৎসার মান ও পরিবেশ খুব ভালো, খরচও অন্য হাসপাতাল থেকে অনেক কম, আর এখানকার ডাক্তাররা অনেক বেশি দায়িত্বশীল। ফলে তিনি তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলেই এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুনাম শুনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নাসিমা আক্তার জানান, তাঁর পাকস্থলীতে পাথর হয়েছে। এই হাসপাতালে মাত্র ১৭ হাজার টাকায় অপারেশন করিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর বালুরচর থেকে আসা কুলসুম বেগম জানান, বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সুনাম শুনে এই হাসপাতালে পাকস্থলীর পাথর অপারেশন করিয়েছেন তিনি। এত কম টাকায় সেবা পাওয়া যায় যা অবাক হওয়ার মতো। গাজীপুর থেকে আসা জোসছনা বেগম জানান, গাজীপুর থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। তখন তাঁর ৯ বছরের মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ওই সময় এক আত্মীয়র কাছে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সুনাম শুনে এখানে ভর্তি করান মেয়েকে। অল্প সময়ের চিকিৎসায় তাঁর মেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে বলে জানান তিনি। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোণ্ডা ইউনিয়নের জাজিরা এলাকা থেকে গাইনি চিকিৎসা নিতে আসা সোমা আক্তার জানান, হাসপাতালটি খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই প্রয়োজন। এখানকার চিকিৎসকরা রোগীদের যত্ন নিয়ে দেখেন। গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আরিফা জাহান সোমা বলেন, ‘রোগীরা শুনে খুশি হবেন, যেসব মায়ের সন্তান হয় না, বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সেসব মায়ের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে এবং টেস্টটিউব শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করছে। বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ বিষয়ে কজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন। আমাদের হাসপাতালে মেয়েদের জরায়ুর অপারেশন করা হয়। বাংলাদেশে আদ্-দ্বীনের আটটি হাসপাতাল রয়েছে। এ হাসপাতালগুলো বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি এবং নারীদের গাইনি চিকিৎসায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।’ বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মরিয়ম বেগম বলেন, ‘রোগীর জন্য এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। এখানকার চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। আমাদের এখানে বিশেষ করে যেসব নবজাতক ভর্তি হয়, ভেন্টিলেটর সাপোর্ট ছাড়া অন্য সব ধরনের চিকিৎসাসেবা এখানে দেওয়া হয়। এই হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৪০টি বেড আছে। এর মধ্যে অন্তত ২৫টি বেডে সব সময় রোগী থাকে। এসব শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ডেঙ্গুসহ সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।’ বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গাজী মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমরা সব ধরনের রোগীর চিকিৎসাসেবা এবং অপারেশন করে থাকি। এখানে সব ধরনের সার্জারি অপারেশন করা যায়। গলব্লাডার, অ্যাপেনডিসাইটিস, লেপারোস্কোপি অপারেশন করা হয়।’
৪ লক্ষাধিক রোজাদারকে বসুন্ধরার ইফতার
Bashundhara Provides Iftar to Over 4 Lakh People this Ramadan
সুশৃঙ্খলভাবে বায়তুল মোকাররমে চলছে বসুন্ধরার ইফতার
Bashundhara's Iftar is Going on at Baitul Mukarram
CSE Gets First Commodity Exchange Licence
দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জের অনুমোদন পেল সিএসই
Bashundhara Foundation Stands by Banglanews Journo Mithun for Cancer Treatment
বাংলানিউজকর্মী মিথুনের ক্যান্সার চিকিৎসায় এগিয়ে এলো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন
প্রতিদিন ১৮ হাজার রোজাদারকে ইফতারি দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ
Bashundhara Group Brings Joy to Madrasahs With Iftar Feast