All news

কুমিল্লায় সেলাই মেশিন পেলেন ২০০ অসচ্ছল নারী

কুমিল্লায় ২০০ জন অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন প্রদান করে বসুন্ধরা শুভসংঘ

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এবং বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে কুমিল্লার ১০টি উপজেলার ২০০ জন অসচ্ছল নারীকে উন্নত মানের সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই নারীদের কাউকে তিন মাস আবার কাউকে চার মাস বিনা খরচে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।

জেলার হোমনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবীদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার ২০০ জন অসচ্ছল নারীকে এই সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অডিটরিয়ামে এই বিতরণ অনুষ্ঠান করা হয়।

সেলাই মেশিন পেয়ে অসচ্ছল নারীরা বলেছেন, তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথ দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। 
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই ছিলেন অতিথি। তাদের মধ্যে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমন উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লায় অনেক মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। আমি নিজেও ঘর তৈরি করে দিয়েছি। আজ বসুন্ধরা শুভসংঘ অসচ্ছল নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে। এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
উপহার পাওয়া নারীদের উদ্দেশে বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপনারা নিজেদের পরিবারের আরেকজনকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিন। আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

আরেক অতিথি কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে। এই কল্যাণমূলক কাজগুলোর মধ্য দিয়ে তারা আরো এগিয়ে যাবে।’ 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শুভসংঘের মাধ্যমে আমরা করোনার সময় উত্তরবঙ্গে হাজার হাজার অসহায় মানুষকে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছি।

প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়াসহ সারা দেশে আরো অনেক কল্যাণমূলক কাজ করি থাকি।’ 
ইমদাদুল হক মিলন আরো বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দিকনির্দেশনায় প্রায় প্রতিটি জেলাতেই আমরা অসচ্ছল নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করেছি। কুমিল্লায়ও ১০টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সেই মানুষদের মেশিন উপহার দিয়েছি, যারা নিম্নবিত্ত কিন্তু কারো কাছে হাত পাতে না। এ ছাড়া সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের বিনা সুদে ঋণ দিয়ে আসছি। সারা দেশে ৩০টির বেশি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। যারা অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না, তাদের পাশে শুভসংঘ আছে। কুমিল্লায়ও যদি কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে না পারে, তাহলে আমরা তাদের বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেব।’ 

বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও কালের কণ্ঠ’র প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ শুভ কাজ করে যাচ্ছে দেশ ও দেশের কল্যাণে। মানুষের মুখে যখন বসুন্ধরা গ্রুপের ভালো কাজের কথা শুনি তখন ভালো লাগে। যারা সেলাই মেশিন পেয়েছেন তাঁদের অনুরোধ করব, আপনি ও আপনার পরিবার এটাকে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হবেন।’ 

কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের যে শুভ উদ্যোগ, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ সালের বাংলাদেশ গঠনেরই একটি প্রয়াস বলে আমি মনে করি। এই উদ্যোগের জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ ও শুভ কামনা জানাই।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা এখান থেকে ২০০ জন উদ্যোক্তা পেলে তাদের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ প্রশিক্ষিত হতে পারবে। এতে করে আমাদের দেশ ও সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। এই উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

কুমিল্লা ভিকটোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, ‘ভালো কাজের পাশে থাকতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার। এটা সবাই পারে না। আমাদের দেশের কিছু ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা গ্রামের মানুষদের ঋণ দিয়ে দিয়ে পরে মোটা সুদে কিস্তির টাকার জন্য গলা চেপে ধরে। অথচ বসুন্ধরা গ্রুপ বিনা সুদে মানুষকে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছে।’ 

বসুন্ধরা শুভসংঘ, কুমিল্লার প্রধান উপদেষ্টা এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘একটা মেশিন থেকে যাতে একটা ইন্ডাস্ট্রি হয়, সেই প্রত্যাশা নিয়ে আপনারা কাজ করে যাবেন।’ 

সেলাই মেশিন নিতে আসা উপকারভোগীদের মধ্যে চান্দিনার শতাব্দী সূত্রধর তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা নেই, মায়ের পক্ষে আমাদের ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে। এখন আমি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব, আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারব।’

SOURCE : কালের কণ্ঠ