All news

বসুন্ধরার সহযোগিতায় ওমরাহ শেষে ফিরলেন আরো ৩৩ মুসল্লি

বসুন্ধরার সহযোগিতায় ওমরাহ শেষে ফিরলেন আরো ৩৩ মুসল্লি

বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় সৌদি আরবের মক্কা-মদিনায় পবিত্র ওমরাহ হজ পালন শেষে দ্বিতীয় ধাপের ৩৩ জন মুসল্লির কাফেলা দেশে পৌঁছেছে। নিজস্ব অর্থায়নে তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে কুয়েত এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ওমরাহ পালনকারীরা। তারা সৌদি আরবে ১৪ দিন অবস্থান করেন এবং ওমরাহ পালন শেষে দেশটির বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখেন।

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এবং বাজুস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় ধাপে ওমরাহ পালন করে আসা হাজীরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই ধাপের মুসল্লিরা গত ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে ওমরাহ হজ পালনের উদ্দেশে ঢাকা থেকে মক্কা-মদিনায় রওনা হন।

এই কাফেলায় ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মো. ইসহাক বিন মহসিন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল মক্কা এবং মদিনা দেখা। বারবার আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছি। সেই ফরিয়াদ আল্লাহ কবুল করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের মাধ্যমে। আমরা সেখানে গিয়ে তাওয়াফ করেছি, সাফা-মারওয়া সায়ী করেছি, আমরা জাবালে নূরে উঠেছি। রাসুলের (সা.) কাছে যেখানে কোরআন নাজিল হয়েছে সেই জায়গা আমরা দেখেছি। আরাফার ময়দানে গিয়েছি। যেখানে পাথর নিক্ষেপ করা হয়, মিনা-মুজদালিফা দেখেছি। পবিত্র কাবা শরীফে দোয়া ইউনুস সোয়া লাখবার পড়ে মোনাজাত করেছি। বসুন্ধরা গ্রুপ, আমাদের পরিবারসহ সবার জন্য দোয়া করেছি। আবার মদিনায় গিয়ে দরুদ শরীফের খতম করেছি, রওজা শরীফ জিয়ারত করেছি। দোয়া করেছি যেন আল্লাহ হজের তাওফিক দান করেন এবং যারা আমাদের পাঠিয়েছেন তাদের যেন উন্নতি হয়। আমরা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য দোয়া করেছি।  

তিনি আরো বলেন, আমাদের যাদের মাথায় টুপি ছিল না, যাদের মুখে দাঁড়ি ছিল না, এই সফরে সবাই নতুন উদ্যম পেয়েছে দ্বিনের পথে। আমাদের এই ৩৩ জনের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে আলহামদুলিল্লাহ! ধর্মীয় দিক থেকে অগ্রসর হয়েছে। রওজা শরীফে গিয়ে আনন্দে আমাদের যে কত চোখের পানি পড়েছে, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন ও মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের জীবনে স্বপ্ন ছিল হজ পালন করার। অভাব-অনটনের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, বসুন্ধরার এমডির কারণে সে সুযোগ হলো। এ জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। আমরা প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে তাঁর জন্য দোয়া করেছি।

কাফেলার অন্য সদস্য মো. আবিদ মিয়া এবং মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, এমন একটা সুযোগ পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। পবিত্র ভূমিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোখে পানি এসে গিয়েছিল, কত দিনের স্বপ্ন! আমরা জীবনে কোনো দিন ভাবতে পারিনি যে আমরা ওমরাহ পালন করতে পারব। আমরা নিজেদেরসহ বসুন্ধরা গ্রুপ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য দোয়া করেছি যেন ভবিষ্যতে তারা আরো বেশি মানুষকে এমন সুযোগ করে দিতে পারেন। আমাদের ওমরাহতে নিয়ে গেল, খুব ভালো খেদমত আমরা পেয়েছি। যাওয়ার পরও আমাদের সবাইকে ৩০০ রিয়াল করে উপহার দিয়েছেন।

কথা বলতে গিয়ে আবেগে কান্না করে দেন মোশারফ হোসেন। অশ্রুভেজা কণ্ঠেই বলেন, আমরা অন্তর থেকে দোয়া করি যেন এই গ্রুপের সবার খুব ভালো হয়!

ওমরাহ করে আসা মুসল্লিদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুসল্লি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানিক এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. নাজমুল হুদা।

তারা বলেন, গত রমজানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর ৫০ হাজার মুসল্লিকে ইফতার করান। এর মধ্যে এক দিন তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন। সে সময় তিনি ১০০ জন সামর্থ্যহীন ব্যক্তিকে ওমরাহ হজ করানোর ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে মোট ১০৪ জনের ব্যবস্থা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপের ২৬ জনের পর আজ দ্বিতীয় ধাপের ৩৩ জন ওমরাহ হজ পালন করে এসেছেন। আমরা দেশে থেকেও সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চেষ্টা করেছি তাদের যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় এবং সুন্দরভাবে ওমরাহ সম্পন্ন করতে পারেন।

এ ছাড়া বর্তমানে আরো ২৭ জন ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং এ মাসেই পরবর্তী কাফেলায় আরো ১৮ জনকে ওমরাহ পালনে পাঠানো হবে বলেও এ সময় আশা প্রকাশ করেন তারা।

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর হাজীরা বসুন্ধরার নিজস্ব পরিবহনে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। 

এর আগে সৌদি আরবের উদ্দেশে ওমরাহ হজের প্রথম কাফেলাটি রওনা হয় ২৬ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে ওমরাহযাত্রা উপলক্ষে সব ওমরাহযাত্রীকে শুকনো খাবারসহ সৌজন্য উপহার দেওয়া হয়। পরে কাফেলাটি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে।

SOURCE : কালের কণ্ঠ