All news

বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে নাটোরে ২০ নারীকে সেলাই মেশিন উপহার

বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে নাটোরে ২০ নারীকে সেলাই মেশিন উপহার

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ নাটোরের লালপুর উপজেলায় ২০ জন অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে। গতকার রোববার (২৮ এপ্রিল) উপজেলার ডেবরপাড়া বুধিরামপুর গ্রামের বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে সেলাই মেশিনগুলো তুলে দেওয়া হয়।

সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে লালপুর বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি ও শুভসংঘ স্কুলের সমন্বয়ক জালাল উদ্দীন বাবুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ।

এ সময় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশে সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমার নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার মান উন্নয়নে স্কুল প্রতিষ্ঠা ও অসহায়, বিধবা, এতিম, দরিদ্র অসচ্ছল নারীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকের হাতে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হচ্ছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ’
এ সময় সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘এমন কর্মকাণ্ডের ফলে নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাশাপাশি আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে আর এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। ’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। সেই উন্নয়নে যাঁরাই অংশীদার হবেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই। ’

শুভসংঘ নাটোর জেলা শাখার উপদেষ্টা ও ইউনাইটেড প্রেস ক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় সারা দেশে খুঁজে খুঁজে দরিদ্র অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শুভসংঘের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তারা যাতে সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারেন এ জন্য আজকের এই সেলাই মেশিন বিতরণ। তারা এটি দিয়ে কাপড় সেলাই করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন বলে আমরা আশা করছি। ’
তিনি বলেন, ‘শুভ কাজে সবার পাশে’-এই স্লোগান সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন শুভসংঘের সদস্যরা। তারা সমাজ উন্নয়নমূলক নানা কাজের পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিচালনাসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষদের নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছেন।

লালপুর সদর ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার এলাকায় এমন একটি কাজ হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে স্থাপন করা হয়েছে তার আশপাশে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এখন এ অঞ্চলের শিশুরা সেখানে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি এই সেলাই মেশিন পেয়ে অবশ্যই অসচ্ছল নারীরা স্বাবলম্বী হবেন। ’

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা, লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, মাজার শরীফ টিবিএম কলেজের অধ্যক্ষ ইমাম হাসান মুক্তি।

সেলাই মেশিন উপহার পাওয়া উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের শিরিনা খাতুন (৩৮) বলেন, ‘আমি বিধবা, আমার দুই সন্তান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব অভাবে দিনপাত করছি, রোজগারের জন্য আমি সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন সেলাই মেশিন দিয়ে আয়-রোজগার করে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারব। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। ’

বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেলাই মেশিন পাওয়া মনিরা বেগম (৪০) বলেন, ‘দিনমজুরির কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের খরচ চালাই। আমার এই অবস্থা দেখে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই শেখার সুযোগ করে দেয় এবং তিন মাস ফ্রি প্রশিক্ষণ শেষে আজ সেলাই মেশিন উপহার পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এই সেলাই মেশিন পেয়ে সংসারে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারব। সন্তানটিকে ভালোভাবে লেখাপড়া করাতে পারব। এ জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি চিরদিন ঋণী হয়ে থাকব। পাশাপাশি আমার মতো অনেক অসহায় নারী এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখছে। ’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন লালপুর ডিগ্রি কলেজের পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ, লালপুর থানা কেন্দ্রীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ সেন্টু, ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিমানুর রহমান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার মো. মামুন, নাটোর বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান শৈকত, সাধারণ সম্পাদক সুষ্ময় দাস, লালপুর বসুন্ধরা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, কেএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক গোলাম সরোয়ার মিলন প্রমুখ।

SOURCE : News 24