All news

বিশ্বজয়ীদের পাশে বসুন্ধরা

প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ

'জ্বলে উঠো বাংলাদেশ/গর্জে উঠো বাংলাদেশ/স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ব জয়ে তুমি যাও/তুমি এগিয়ে যাও/কোটি প্রাণের আশা পূরণ করে দাও/লাল-সবুজের বিজয় নিশান হাতে হাতে ছড়িয়ে যাও।' শিহরণ জাগানিয়া বাণীসমৃদ্ধ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে জিনাত ও তার দলের সদস্যরা। এরপর ভরাট কণ্ঠের জাদু নিয়ে আসে নুরুজ্জামান। তার গাওয়া 'মায়ের এক ধার দুধের দাম/কাটিয়া গায়ের চাম/পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না' ও 'একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর রে মন আমার/কেন বান্ধ দালান ঘর' গান দুটি শ্রোতা-দর্শকদের মাতিয়ে তোলে।

ছড়িয়ে দেয় মুগ্ধতার আবেশ।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, ওরা সবাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। শুধু নাচ বা গানে নয়, খেলাধুলায়ও বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর মন জয় করেছে সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব দ্য ইন্টেলেকচ্যুয়ালি ডিসঅ্যাবল্ড (সুইড) বাংলাদেশের জিনাত ও নুরুজ্জামানরা। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন বিশেষ অলিম্পিকে সোনাসহ ৫৮টি পদক গলায় ঝুলিয়েছে ওরা।

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের সুইড আলমগীর এম এ কবির মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার বসুন্ধরা গ্রুপের সৌজন্যে বিজয়ীদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করে সুইড বাংলাদেশ। 'বিজয়ী তোমরা, গর্বিত আমরা' শিরোনামে সুইড বাংলাদেশের পদকজয়ী ক্রীড়াবিদ ও কোচদের সম্মাননা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সুইড বাংলাদেশের প্রত্যেক বিজয়ীকে দেওয়া হয় নগদ পাঁচ হাজার টাকা। একই সঙ্গে আশ্বাস দেওয়া হয়, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের স্বপ্নপূরণে পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। একই সময় বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক মিসেস ইয়াশা সোবহান নাবিলা বিজয়ীদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আতিয়ার রহমান, ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জাকির আহমেদ, সুইড বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ মোসলেম, সংগঠনের মানিকগঞ্জ শাখার সভাপতি দিলারা মোস্তফা প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মির্জা আজম বলেন, 'প্রতিবন্ধী শিশুকে এক সময় পরিবারের বোঝা মনে করা হতো। আজ সেই প্রতিবন্ধী সন্তানগুলোই পরিবারসহ দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।

আজ আর ওরা বোঝা নয়, পরিবার ও দেশের সম্পদ।' তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। তাঁর সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আন্দোলন করছেন। শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।'
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সরকার প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে জামালপুরে সাত কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।' বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সুইড বাংলাদেশ ও বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক মিসেস ইয়াশা সোবহান নাবিলা বলেন, 'আমি আনন্দিত যে সুইড বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রতিভা বিকাশে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব শিশু একদিন দেশের উন্নয়নে অংশীদার হবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।' শিশুদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'বিশেষ অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে তোমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পদক জয় করে এনেছো। তোমাদেরকে আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তোমরা যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদক জয় করেছো, তা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। আশা করি, ভবিষ্যতে তোমরা আরো পদক জয় করবে, দেশের সুনাম বৃদ্ধি করবে।'

শিশুদের আশ্বাস দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক বলেন, 'আমরা তোমাদের পাশে আছি, থাকব। তোমাদের নিয়ে আমরা এমন একটি কার্যক্রম করতে যাচ্ছি, যা তোমাদের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করবে।' শিশুদের সুস্বাস্থ্য কামনার পাশাপাশি ওদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সুইড বাংলাদেশ পরিবারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই লস এঞ্জেলেসে শুরু হয় স্পেশাল অলিম্পিক-২০১৫। এই বিশেষ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ছয়টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে মোট ৭৯টি পদক জয় করে। এর মধ্যে ৪০টি স্বর্ণ, ২৮টি রৌপ্য ও ১১টি ব্রোঞ্জ পদক। এর মধ্যে সুইড বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা ৫৮টি পদক পায়, যার মধ্যে ১৮টিই স্বর্ণপদক।

SOURCE : কালের কণ্ঠ