সাবিকুন্নাহার মিম, সুমাইয়া আক্তার সুরভী কিংবা দামুড়হুদার রোজিনা খাতুন অথবা শুকতারা খাতুনের পারিবারিক দৃশ্যপট ও জীবনের গল্প ভিন্ন। কারো বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরের নিভৃত কোনো গ্রামে আবার কারো বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার নানা প্রান্তে। কেউ স্কুলপড়ুয়া, কেউ বা স্বামী কিংবা পিতৃহারা। কারো সঙ্গে কারো নাম-পরিচয় আর ঠিকানার মিল না থাকলেও জীবনের একটি গল্পের চরিত্রে মিলে যান তাঁরা সবাই।
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় স্বপ্নপূরণের আশা তাঁদের সাধ আছে, সাধ্য নেই। জীবনরেখার এক প্রান্তে এসে একেকটি পরিবারের দুঃখের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেন সবাই। ভাগ্যের কশাঘাতে পিছিয়ে পড়া এই নারীরা পিছিয়ে থাকতে চাননি। তাঁরা অগ্রসর হতে চেয়েছেন অগ্রভাগে, কিন্তু তাঁদের দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।
কেননা নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারে স্বপ্ন দেখাও যে অপরাধ! স্বপ্ন ছুঁতেও প্রয়োজন একটি নির্ভরতা আর ভরসার হাত। চুয়াডাঙ্গার এমন কিছু নারীর স্বপ্নপূরণে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে প্রাপ্ত সেই সহায়তায় এবার স্বপ্ন ছুঁতে চলেছেন দুঃখে নিমজ্জিত এই নারীরা। সহায়তা পেয়ে তাঁরা ব্যক্ত করেছেন স্বপ্নপূরণের দৃঢ় প্রত্যয়।
বিনামূল্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের ২০ জন ও দামুড়হুদার ২০ জন নারীকে টানা তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের উপহারের এই সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে আপ্লুত-উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর এই দরিদ্র নারীরা। চোখে-মুখে হাজার স্বপ্নের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এখন অনটনকে পেছনে ফেলে সেলাই মেশিনের চাকায় তাঁরা ঘোরাবেন জীবনের বাঁক। বদলাবেন অনিশ্চিত গল্পের প্রেক্ষাপটও। সুই-সুতার বুননে বুনবেন অধরা স্বপ্ন।
বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে এই ৪০ জন নারী হবেন প্রতিটি পরিবারের সফল চরিত্র, সংসারের অবলম্বন। এই সেলাই মেশিনই হয়ে উঠবে তাঁদের আত্মমর্যাদা ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক। কারো কারো কাছে প্রায় থমকে যাওয়া পড়ালেখার নিরবচ্ছিন্ন হাতিয়ার। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্ব বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রতিনিয়ত এমন দুঃসাহসিক উদ্যোগ হাতে নেয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার অসহায় নারীদের বাছাই করে গত তিন বছরে তিন হাজারের বেশি সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। যাঁদের মেশিন দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিয়মিত খোঁজখবরও রাখা হচ্ছে। একটি মেশিন থেকে এখন চার-পাঁচটি মেশিনের মালিকও হয়েছেন অনেক নারী। অনেকে ধরেছেন গোটা সংসারের হাল। শুধু এমন মহতী উদ্যোগই নয়, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও মানবতার কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ওই ৪০ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মৌমিতা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) প্রজেক্ট অফিসার ইল্লিন সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর, চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার মো. মামুন, বসুন্ধরা শুভসংঘ দামুড়হুদা উপজেলা শাখার সহসভাপতি হাজি আব্দুল কাদির ও নাজমুল হুদা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত কুমার সিংহ রায়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বসুন্ধরা শুভসংঘের সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে স্বাগত বক্তব্য দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের উদ্যোগে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন স্যারের পরিকল্পনায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সব মহতী কার্যক্রম শুরু হয়। অন্য সব কাজের পাশাপাশি তিন বছর ধরে বসুন্ধরা শুভসংঘ দরিদ্র নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে মেশিন উপহার দিয়ে আসছে, যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান। আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশই ছিল, প্রান্তিক নারীরা যাতে সচ্ছল হতে পারেন। তাঁদের যেন টেকসই উন্নয়ন হয়। সেই নির্দেশনা থেকেই এখন পর্যন্ত তিন হাজারের অধিক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে, যাঁরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। এই মেশিন হয়ে উঠেছে জীবনের গল্পবদলের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বসুন্ধরা গ্রুপের বিতরণ করা এই সেলাই মেশিন দান কিংবা ত্রাণ নয়, এটি তাঁদের জন্য উপহার। তাঁদের সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর হাতিয়ার।
হেমন্ত কুমার সিংহ রায় বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় আমাদের কমিটি গঠনের পর থেকেই নানামুখী সামাজিক ও মানবিক কাজ করে চলেছি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও মানুষের ভাগ্যবদলে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে সহায়তা করে, তা অনুকরণীয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সব শুভ কাজে আমরা দায়িত্ব নিতে চাই, সমাজ পরিবর্তনের সারথি হতে চাই।’
সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন কালের কণ্ঠর ঝিনাইদহের নিজস্ব প্রতিবেদক অরিত্র কুণ্ডু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও বসুন্ধরা শুভসংঘের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উপদেষ্টা জামান আখতার, কালের কণ্ঠের দামুড়হুদা উপজেলা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, জীবননগর উপজেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম, বসুন্ধরা শুভসংঘের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শেখ লিটন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শামসুজ্জোহা রানাসহ একঝাঁক তরুণ সদস্য।
উপহারের সেলাই মেশিন পাওয়া চুয়াডাঙ্গা শহরের শেখপাড়ার কুলসুম খাতুন বলেন, ‘আমাদের পাঁচ সদস্যের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাত্র একজন। একজনের নিম্ন আয়ে পুরো পরিবার চালানো খুব কঠিন ব্যাপার। খুব চেষ্টা ছিল নিজে কিছু করার, কিন্তু কোথাও কোনো সুযোগ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষমেশ বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তিন মাস ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে আবার একটি সেলাই মেশিনও দিয়েছে। এই মেশিনেই ফিরতে পারে পরিবারে সচ্ছলতা। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।’
আরেক উপকারভোগী জারিন তাসনিম বলেন, ‘যেখানে পরিবারের অভাব মেটানোই দায়, সেখানে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানো খুবই কঠিন। আমার পড়াশোনা প্রায় থমকে গিয়েছিল। চেয়েছিলাম পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটি সম্মানজনক আয়ের পথ তৈরি করতে। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। বসুন্ধরা গ্রুপের মাধ্যমে সেই চেষ্টা এবার সফল হয়েছে। এই সেলাই মেশিন দিয়েই নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নিতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’
দামুড়হুদা উপজেলার আরেক শিক্ষার্থী শারমিতা খাতুন বলেন, ‘নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর বিষয়ে চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অনেক সময় থেমে যেতেও হয়েছে। কিন্তু এখন থেকে অর্থাভাবে পড়ালেখা থমকে যাবে না। কারণ এই সেলাই মেশিনেই নানা ধরনের কাজ করে আয় করা সম্ভব, যা আমার পড়ালেখার খরচ জোগাবে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা।’
SOURCE : News 24Hospital for Covid-19 Patients at Bashundhara’s ICCB to Open Soon
মীরসরাই এবং কেরানীগঞ্জে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরা গ্রুপ কাপ গলফ টুর্নামেন্ট ২০১৩ গলফারদের উৎসব
Dazzling Finish of Bashundhara Cup Golf Tournament 2013
Bashundhara Group Exporting Tissue to 16 Countries
Bashundhara Group Chairman Stands by Ailing Girl
Bashundhara Group Chairman Ahmed Akbar Sobhan Stands by Sick Tasmia
India Willing Partner in Bangladesh Development
Bashundhara Group Chairman Stands by Ailing Boy Siraj
Ceremony of Bashundhara Cup Golf