All news

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় স্বপ্নপূরণের আশা

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় স্বপ্নপূরণের আশা

সাবিকুন্নাহার মিম, সুমাইয়া আক্তার সুরভী কিংবা দামুড়হুদার রোজিনা খাতুন অথবা শুকতারা খাতুনের পারিবারিক দৃশ্যপট ও জীবনের গল্প ভিন্ন। কারো বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরের নিভৃত কোনো গ্রামে আবার কারো বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার নানা প্রান্তে। কেউ স্কুলপড়ুয়া, কেউ বা স্বামী কিংবা পিতৃহারা। কারো সঙ্গে কারো নাম-পরিচয় আর ঠিকানার মিল না থাকলেও জীবনের একটি গল্পের চরিত্রে মিলে যান তারা সবাই।

তাদের সাধ আছে, সাধ্য নেই। জীবনরেখার এক প্রান্তে এসে একেকটি পরিবারের দুঃখের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেন সবাই। ভাগ্যের কশাঘাতে পিছিয়ে পড়া এই নারীরা পিছিয়ে থাকতে চাননি। তারা অগ্রসর হতে চেয়েছেন অগ্রভাগে, কিন্তু তাদের দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।

কেননা নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারে স্বপ্ন দেখাও যে অপরাধ! স্বপ্ন ছুঁতেও প্রয়োজন একটি নির্ভরতা আর ভরসার হাত। চুয়াডাঙ্গার এমন কিছু নারীর স্বপ্নপূরণে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে প্রাপ্ত সেই সহায়তায় এবার স্বপ্ন ছুঁতে চলেছেন দুঃখে নিমজ্জিত এই নারীরা। সহায়তা পেয়ে তাঁরা ব্যক্ত করেছেন স্বপ্নপূরণের দৃঢ় প্রত্যয়।

বিনামূল্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের ২০ জন ও দামুড়হুদার ২০ জন নারীকে টানা তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের উপহারের এই সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে আপ্লুত-উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর এই দরিদ্র নারীরা। চোখে-মুখে হাজার স্বপ্নের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এখন অনটনকে পেছনে ফেলে সেলাই মেশিনের চাকায় তারা ঘোরাবেন জীবনের বাঁক। বদলাবেন অনিশ্চিত গল্পের প্রেক্ষাপটও। সুই-সুতার বুননে বুনবেন অধরা স্বপ্ন।

বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে এই ৪০ জন নারী হবেন প্রতিটি পরিবারের সফল চরিত্র, সংসারের অবলম্বন। এই সেলাই মেশিনই হয়ে উঠবে তাদের আত্মমর্যাদা ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক। কারো কারো কাছে প্রায় থমকে যাওয়া পড়ালেখার নিরবচ্ছিন্ন হাতিয়ার। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্ব বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রতিনিয়ত এমন দুঃসাহসিক উদ্যোগ হাতে নেয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার অসহায় নারীদের বাছাই করে গত তিন বছরে তিন হাজারের বেশি সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। যাঁদের মেশিন দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়মিত খোঁজখবরও রাখা হচ্ছে। একটি মেশিন থেকে এখন চার-পাঁচটি মেশিনের মালিকও হয়েছেন অনেক নারী। অনেকে ধরেছেন গোটা সংসারের হাল। শুধু এমন মহতী উদ্যোগই নয়, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও মানবতার কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।

সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ওই ৪০ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মৌমিতা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) প্রজেক্ট অফিসার ইল্লিন সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর, চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার মো. মামুন, বসুন্ধরা শুভসংঘ দামুড়হুদা উপজেলা শাখার সহসভাপতি হাজি আব্দুল কাদির ও নাজমুল হুদা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত কুমার সিংহ রায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বসুন্ধরা শুভসংঘের সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে স্বাগত বক্তব্য দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের উদ্যোগে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন স্যারের পরিকল্পনায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সব মহতী কার্যক্রম শুরু হয়। অন্য সব কাজের পাশাপাশি তিন বছর ধরে বসুন্ধরা শুভসংঘ দরিদ্র নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে মেশিন উপহার দিয়ে আসছে, যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান। আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশই ছিল, প্রান্তিক নারীরা যাতে সচ্ছল হতে পারেন। তাঁদের যেন টেকসই উন্নয়ন হয়। সেই নির্দেশনা থেকেই এখন পর্যন্ত তিন হাজারের অধিক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে, যাঁরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। এই মেশিন হয়ে উঠেছে জীবনের গল্পবদলের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বসুন্ধরা গ্রুপের বিতরণ করা এই সেলাই মেশিন দান কিংবা ত্রাণ নয়, এটি তাঁদের জন্য উপহার। তাঁদের সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর হাতিয়ার।

হেমন্ত কুমার সিংহ রায় বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় আমাদের কমিটি গঠনের পর থেকেই নানামুখী সামাজিক ও মানবিক কাজ করে চলেছি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও মানুষের ভাগ্যবদলে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে সহায়তা করে, তা অনুকরণীয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সব শুভ কাজে আমরা দায়িত্ব নিতে চাই, সমাজ পরিবর্তনের সারথি হতে চাই।’

সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন কালের কণ্ঠর ঝিনাইদহের নিজস্ব প্রতিবেদক অরিত্র কুণ্ডু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও বসুন্ধরা শুভসংঘের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উপদেষ্টা জামান আখতার, কালের কণ্ঠের দামুড়হুদা উপজেলা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, জীবননগর উপজেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম, বসুন্ধরা শুভসংঘের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শেখ লিটন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শামসুজ্জোহা রানাসহ একঝাঁক তরুণ সদস্য।

উপহারের সেলাই মেশিন পাওয়া চুয়াডাঙ্গা শহরের শেখপাড়ার কুলসুম খাতুন বলেন, ‘আমাদের পাঁচ সদস্যের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাত্র একজন। একজনের নিম্ন আয়ে পুরো পরিবার চালানো খুব কঠিন ব্যাপার। খুব চেষ্টা ছিল নিজে কিছু করার, কিন্তু কোথাও কোনো সুযোগ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষমেশ বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তিন মাস ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে আবার একটি সেলাই মেশিনও দিয়েছে। এই মেশিনেই ফিরতে পারে পরিবারে সচ্ছলতা। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।’ 

আরেক উপকারভোগী জারিন তাসনিম বলেন, ‘যেখানে পরিবারের অভাব মেটানোই দায়, সেখানে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানো খুবই কঠিন। আমার পড়াশোনা প্রায় থমকে গিয়েছিল। চেয়েছিলাম পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটি সম্মানজনক আয়ের পথ তৈরি করতে। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। বসুন্ধরা গ্রুপের মাধ্যমে সেই চেষ্টা এবার সফল হয়েছে। এই সেলাই মেশিন দিয়েই নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নিতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’ 

দামুড়হুদা উপজেলার আরেক শিক্ষার্থী শারমিতা খাতুন বলেন, ‘নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর বিষয়ে চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অনেক সময় থেমে যেতেও হয়েছে। কিন্তু এখন থেকে অর্থাভাবে পড়ালেখা থমকে যাবে না। কারণ এই সেলাই মেশিনেই নানা ধরনের কাজ করে আয় করা সম্ভব, যা আমার পড়ালেখার খরচ জোগাবে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা।’


অসুস্থ শিক্ষার্থী আরফির নতুন স্বপ্নযাত্রা

1

দেখতে সাধারণ একটি সেলাই মেশিন হলেও এই মেশিনই যেন কলেজপড়ুয়া আরফি আক্তারের জীবনে এনেছে আলোর দিগন্ত। যে মেয়েটি কিছুদিন আগেও ভেবেছিলেন পড়াশোনা হয়তো থেমে যাবে, নিজের চিকিৎসা আর মায়ের ওষুধ কেনা হবে না। সেই মেয়েটিই এখন আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাজারপাড়া এলাকার মেয়ে আরফি।

সাত বছর আগে স্ট্রোকে বাবা মারা যান। তখন থেকেই শুরু হয় মা ও তিন মেয়ের কষ্টের সংসার। তবু হাল ছাড়েননি আরফি। ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল চিকিৎসার পরও লড়াই চালিয়ে গেছেন জীবন আর পড়াশোনার সঙ্গে।

ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য তখনই খরচ হয়েছিল প্রায় সাত লাখ টাকা। আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সেই অপারেশন করা হয়। এ বছর এইচএসসি পাস করেছেন ভালো ফল নিয়ে, কিন্তু অনার্সে ভর্তি হওয়ার খরচই হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বড় বাধা। তখনই আরফির পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ।

তিন মাসের বিনামূল্যের সেলাই প্রশিক্ষণ শেষ করে এখন তিনি পেয়েছেন নিজের উপার্জনের হাতিয়ার, একটি সেলাই মেশিন। সেলাই মেশিন পেয়ে তাঁর চোখে-মুখে তখন উচ্ছ্বাস, কৃতজ্ঞতা আর নতুন জীবনের আলো। আবেগভরা কণ্ঠে আরফি বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা তিন বোন আর মা খুব কষ্টে ছিলাম। আমার চিকিৎসা, মায়ের চিকিৎসা—সবকিছুই ছিল অনিশ্চিত। তারপর শুভসংঘের প্রশিক্ষণ নিলাম, এখন মেশিন পেয়েছি।

নিজের পড়াশোনার খরচও টানতে পারব, মায়ের চিকিৎসায়ও সাহায্য করতে পারব। আমি খুব খুশি। শুভসংঘ আমার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সেলাই মেশিনের চাকায় এখন ঘুরবে আমার ভাগ্যচাকা।’

বসুন্ধরা শুভসংঘের এই উদ্যোগে আরফির মতো অসংখ্য নারী এখন নিজ হাতে গড়ে নিচ্ছেন আত্মনির্ভরতার গল্প। কারো চোখে জল, কারো মুখে হাসি, তবু সবার মাঝে একটিই অনুভূতি, আমরাও পারি।


অতিথিদের কথা
বসুন্ধরার এই উদ্যোগ নারীদের স্বাবলম্বী করবে

2

এম সাইফুল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর, চুয়াডাঙ্গা

সাহায্য কিংবা সহায়তার কথা এলেই আমরা বুঝি এককালীন অর্থ সহায়তা বা প্রণোদনা দেওয়া। দরিদ্র মানুষের কাছে সহায়তা মানেই হয়তো কিছু টাকা। এ ক্ষেত্রে বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ আলাদা। টানা তিন মাস বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে আবার সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগানোর জন্য সেলাই মেশিন উপহার।

এটি অন্যদের চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম। অনুকরণীয় এবং অসচ্ছল নারীদের উন্নয়নের একটি মডেলও বলা যায়। এই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন নারীর নিজের, পরিবারের এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে সমাজে নারীর ক্ষমতায়নও নিশ্চিত হবে।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়ে উঠবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই উদ্যোগ নারীদের আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে মাইলফলক হয়ে থাকবে। যাঁরা সেলাই মেশিন পেয়েছেন, তাঁরা এই সুযোগ কাজে লাগালে অবশ্যই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এ জন্য পরিশ্রম করতে হবে। তাহলেই আপনারা সফল হবেন। আপনারা ভালো কিছু করতে পারলে বসুন্ধরা গ্রুপের এই উপহার বিতরণ সফলতা পাবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের এমন চমৎকার সব কাজ চলমান থাকবে এবং মানবিতকার উদাহরণ সৃষ্টি করবে—এমনটাই প্রত্যাশা করি।


অতিথিদের কথা
নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে

3

মৌমিতা পারভীন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, সদর, চুয়াডাঙ্গা

বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে। অসচ্ছল ও কর্মপ্রত্যাশী নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া তা শুধু একটি উপহার নয়, এটি হলো একটি আত্মমর্যাদার প্রতীক, একটি স্বপ্নের বীজ। আবার তাঁদের কাজ শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মেশিনগুলো নারীদের ঘরে বসেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দেবে, তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে আর সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার পথ দেখাবে।

একজন নারী যখন নিজের উপার্জনের মাধ্যমে সন্তানকে পড়াশোনা করান, পরিবারকে সহযোগিতা করেন, তখন সেটিই হয় প্রকৃত উন্নয়ন। বসুন্ধরা শুভসংঘ সেই উন্নয়নের জন্যই নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সমাজের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার যে উদাহরণ তারা তৈরি করছে, তা সবার জন্য অনুকরণীয়। আমার বিশ্বাস, আজ যাঁরা সেলাই মেশিন পেয়েছেন, তাঁরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প লিখবেন।

আপনারা বেশি বেশি পরিশ্রম করবেন, তাহলেই সফলতা আপনাদের কাছে ধরা দেবে। মনে রাখবেন, পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি। বসুন্ধরা আপনাদের স্বপ্ন বুননের হাতিয়ার দিয়েছে। বাকি কাজটি করতে হবে আপনাদেরই।


অতিথিদের কথা
চুয়াডাঙ্গায় অনেক কাজ করে বসুন্ধরা শুভসংঘ

4

অ্যাডভোকেট মানিক আকবর, সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেস ক্লাব

আমি চুয়াডাঙ্গায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সঙ্গে আছি টানা ১৩ বছর। এই সময়ে শুভসংঘ চুয়াডাঙ্গার অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিউটি নামে নবম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্রী নিজেই তার বিয়ে ঠেকিয়েছিল। তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছিল বসুন্ধরা শুভসংঘ।

তাকে নিয়মিত বৃত্তি দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। ঢাকায় নিয়ে আর্থিক সহায়তা পর্যন্ত করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এর বাইরেও পরিবেশ এবং নদ-নদীকে ঘিরে জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ একাধিকবার নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা শুভসংঘ। কালের কণ্ঠের সাবেক সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন স্যারের পাঠানো বিভিন্ন সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ সারা দেশের মতো চুয়াডাঙ্গার জন্যও অনেক কাজ করেছে। এখনো করছে। আজ ৪০ জন পিছিয়ে থাকা নারীকে এগিয়ে নিতে শুভসংঘের উদ্যোগে দেওয়া হচ্ছে সেলাই মেশিন। এই শুভ দিনটির জন্য আমি অপেক্ষায় থেকেছি।

জানতাম, দিনটি আসবেই, চুয়াডাঙ্গার পিছিয়ে থাকা নারীরাও পাবেন সেলাই মেশিন। আজ যাঁরা সেলাই মেশিন পেলেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা এই উপহারটিকে কাজে লাগাবেন। আপনাদের কেউ কিংবা অনেকেই একটি সেলাই মেশিন থেকে অনেকগুলো সেলাই মেশিন নিয়ে বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। সেই দিনটি দেখার অপেক্ষায়।


অতিথিদের কথা
এই সেলাই মেশিন হবে নতুন জীবনের চাবিকাঠি

5

ইল্লিন সুলতানা, প্রজেক্ট অফিসার ওসিসি, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল

একজন নারী যখন নিজের হাতে কিছু করতে শেখেন, তখন তিনি আর কারো বোঝা হয়ে থাকেন না, বরং তিনি হন নিজের পরিবারের আশ্রয়স্থল। এই সেলাই মেশিনগুলো শুধু একটি যন্ত্র নয়, এগুলো হচ্ছে নতুন জীবনের চাবিকাঠি। এখান থেকেই হয়তো জন্ম নেবে নতুন উদ্যোক্তা, নতুন স্বপ্ন। দরিদ্র পরিবারের নারীদের দক্ষ করে তুলতে এমন একটি অসাধারণ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বসুন্ধরা শুভসংঘকে।

তারা সমাজের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। দেশের উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াবেন, নিজের ভাগ্য গড়ার ক্ষমতা অর্জন করবেন।

বসুন্ধরা শুভসংঘ শুধু মেশিনই দেয়নি, দিয়েছে প্রশিক্ষণও। প্রশিক্ষণ ছাড়া এই সেলাই মেশিন কোনো কাজে আসত না। যেসব বোন সেলাই মেশিন পেয়েছেন, তাঁদের বলব এই সুযোগ কাজে লাগান। ছোট করে শুরু করুন, ধীরে ধীরে বড় স্বপ্ন দেখুন। একদিন দেখবেন, আপনার পরিশ্রমই আপনাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাবে। আমরা সবাই যদি একে অপরের পাশে থাকি, তবে একদিন আমাদের সমাজে কোনো নারীকে অসহায় বলা যাবে না।


অতিথিদের কথা
আত্মনির্ভরতার দীক্ষা দিয়েছে বসুন্ধরা

7

রাজীব হাসান কচি, সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাব

অনেক সময় খবরের কাগজে, টেলিভিশনে দারিদ্র্যের গল্প লিখি, অসহায় মানুষের কষ্ট দেখি, কিন্তু আজ এখানে আমরা একটি আশার গল্প দেখতে পাচ্ছি। সেই আশার গল্পের কারিগর বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশসেরা এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বসুন্ধরা শুভসংঘ যেভাবে অসচ্ছল নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে, সেটি শুধু সহানুভূতির উদাহরণ নয়, মানবতার ও দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি, সমাজে পরিবর্তন আনতে শুধু কলম নয়, কাজের মাধ্যমেও বার্তা দিতে হয়।

বসুন্ধরা শুভসংঘ সেই কাজটিই করছে। তারা প্রমাণ করেছে, সংবাদমাধ্যম শুধু খবর দেয় না, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের চালিকাশক্তিও হতে পারে। যেসব বোন সেলাই মেশিন পেয়েছেন, তাঁরা হয়তো আগামীকাল নিজেদের পরিবার চালাবেন, সন্তানদের পড়াশোনা করাবেন, এটিই প্রকৃত উন্নয়ন। এটি কোনো অনুদান নয়, এটি আত্মনির্ভরতার দীক্ষা।

আপনারা প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়েছেন, এখন পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হোন। অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাই মেশিনের অভাবে কাজ করতে পারে না। বসুন্ধরা শুভসংঘ আপনাদের প্রশিক্ষণ ও মেশিন দুটিই দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হোন। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনুন।

SOURCE : কালের কণ্ঠ