All news

কুমিল্লার বানভাসী মানুষের পাশে বসুন্ধরা, হাসি ফুটেছে ৫ শতাধিক পরিবারে

কুমিল্লার বানভাসী মানুষের পাশে বসুন্ধরা, হাসি ফুটেছে ৫ শতাধিক পরিবারে

ভারত থেকে হু হু করে নেমে আসা পানি ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে কুমিল্লা। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বানভাসী মানুষ ছুটছে এদিক-সেদিক। এরই মধ্যে জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন স্থান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বুড়িচং উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
স্রোতের মতো ভেসে গিয়ে পুরো বুড়িচং এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নেই বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। চারদিকে এখন ত্রাণের জন্য হাহাকার। ঠিক এমন সময় কুমিল্লার বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় গোমতীপারের পাঁচ শতাধিক বানভাসী পরিবারকে খাদ্য এবং ওষুধ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে এই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। বুড়িচং ও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বানভাসী মানুষের মধ্যে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। 

গোমতী নদীর চরাঞ্চলের চানপুর এলাকায় সাজানো সংসার ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহন মিয়ার।
ভারত থেকে হু হু করে নেমে আসা ঢলে একমুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেছে তার। বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধে।
বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা পেয়ে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে মোহন বলেন, ‘ভারতের পানি আমার সব শেষ করে দিছে। ২৪ বছর গোমতীর চরাঞ্চলে বসবাস করি। কখনো এত পানি দেখিনি।
হু হু করে পানি এসে কেড়ে নিয়ে গেছে। বসুন্ধরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এ জন্য আমরা তাদের দোয়া করি। তবে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমাদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।’ 
মাইন উদ্দিন নামের বুড়িচংয়ের আরেক বানভাসীও আশ্রয় নিয়েছেন গোমতীর বেড়িবাঁধে। তিনি বলেন, ‘৫০ বছরের জীবনে এত পানি দেখিনি। কোথা থেকে এলো এত পানি, ভাবতেই অবাক লাগে। আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা পথের ফকির। এমন দুর্যোগের সময় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ 

কোহিনুর আক্তার নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশাচালক। থাকতাম গোমতীর চরে। কখনো এত পানি দেখিনি। হঠাৎ করে পানি এসে সব কেড়ে নিয়েছে আমাদের। কিছুই বের করতে পারিনি ঘর থেকে। আমাদের ঘর এখন পানির নিচে। এমন সময়ে শুকনা খাবার দেওয়ার জন্য বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ।’

ত্রাণ বিতরণকালে বসুন্ধরার পক্ষে উপস্থিত থাকা বসুন্ধরা গ্রুপের এবিজি টেকনোলজিস লিমিটেডের নির্বাহী (প্রশাসন) উত্তম সেন ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র বিজ্ঞাপন নির্বাহী মো. শাহ এমরান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় দেশ এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশের যেকোনো দুর্যোগের সময়ে মানুষের পাশে থাকে বসুন্ধরা গ্রুপ। এবারের বন্যায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ 

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অগ্রভাগে থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুশতাক তাহমিদ বলেন, ‘আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কুমিল্লার উদ্দেশে ত্রাণ বিতরণের জন্য এসেছি। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা চাই সবার মধ্যে একতা। আমাদের সব সাধারণ শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকের কাজে এগিয়ে আসুক। আমি দেশের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনকে আহ্বান জানাই আপনারা দলে দলে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। ইতিহাস বলে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলে দেশের এই সংকটময় অবস্থাটি অবশ্যই মোকাবেলা করা সম্ভব। আমাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ।’ 

কুমিল্লা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আসা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মায়িদা ইকবাল বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব, এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে।’ 

মো. ফাহাদ হোসেন ও উম্মে হাবিবা নামের আরো দুই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। এখানে এসে মনে হয়েছে মানুষের জন্য আরো অনেক কাজ করতে হবে।’

SOURCE : কালের কণ্ঠ