All news

সীমান্তবর্তী নারীদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

সীমান্তবর্তী নারীদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

‘বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় শুভসংঘের এই পদক্ষেপ শুধু কয়েকজন নারীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নয়, এটি এক মানবিক বিপ্লবের সূচনা। সীমান্তের নীরব জনপদের এই নারীরা এখন আশার প্রতীক, তারা প্রমাণ করে দেবেন সুযোগ পেলে আমরাও বদলে দিতে পারি নিজের জীবন, নিজের সমাজ।’ সেলাই মেশিন বিতরণের সময় কথাগুলো বলছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। তিন মাস বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শেষে জীবননগর উপজেলার দরিদ্র নারীদের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী উপজেলা জীবননগর, দেশের এক প্রান্তের নীরব এলাকা। এখানে জীবন চলছে ধীরগতিতে, উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। বেশির ভাগ পরিবার নির্ভরশীল কৃষি, দিনমজুরি কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসার ওপর। বিশেষ করে নারীরা প্রায়ই পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পিছিয়ে থাকেন।

তাঁদের স্বপ্ন থাকে, কিন্তু বাস্তবতা সেই স্বপ্নকে অনেক সময় আটকে রাখে। সীমান্তঘেঁষা এই উপজেলার অনেক গ্রামেই এখনো অভাব-অনটন, অচলায়তন আর প্রান্তিক জীবনের ক্লান্ত ছায়া। কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কারো স্বপ্ন থেমে গেছে দারিদ্র্যের কাছে। কেউ পড়াশোনা থামিয়ে দিয়েছেন সংসারের দায়ে, আবার কেউ পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিদিন।

এর মাঝেও তারা স্বপ্ন বুনেন নিজে কিছু করার। জীবননগরের কিছু পরিবারের আশার আলো হয়ে এসেছে বসুন্ধরা শুভসংঘের মানবিক উদ্যোগ। এমন নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বসুন্ধরা শুভসংঘ জীবননগরে দক্ষতা উন্নয়ন ও বিনামূল্যের সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ২০ জন অসচ্ছল নারীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের উপহার হিসেবে নতুন সেলাই মেশিন তুলে দেয়। বসুন্ধরা গ্রুপের এই উপহার পেয়ে যেন এই নারীদের জীবনে নতুন ভোর এসেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বে বসুন্ধরা শুভসংঘ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন দুঃসাহসিক উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে।

গত তিন বছরে দেশের বিভিন্ন জেলার অসহায় নারীদের বাছাই করে তিন হাজারের বেশি সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সীমান্তবর্তী নারীদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপজীবননগর থানা মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামের সামনে সেদিন সকালে উপস্থিত হন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ নারী। অডিটরিয়ামে সাজানো ২০টি সেলাই মেশিন। দরজা খুলে দেওয়া হলো। নারীরা ভেতরে প্রবেশ করলেন। তাঁদের চোখে-মুখে অজানা স্বপ্নের হাতছানি। হাসিমুখে একে একে বসে পড়লেন মেশিনের সঙ্গে রাখা চেয়ারে। অতিথিরা এলেন, শুরু হলো বসুন্ধরা শুভসংঘের শুভ উদ্যোগ নিয়ে কথা বলা। উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দজাদী মাহবুবা মঞ্জুর মৌনা, জীবননগর থানার ওসি মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী, জীবননগর পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শাহজান কবীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জীবননগর উপজেলা আমির মাওলানা মো. সাজেদুর রহমান, সেক্রেটারি মো. মাহফুজুর রহমান, জীবননগর থানা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান, প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার মো. মামুন, কালের কণ্ঠের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি জিসান আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজটোয়েন্টিফোরের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি জামান আখতার, বসুন্ধরা শুভসংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শেখ লিটন, জীবননগর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তারেক, জীবননগর থানা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. আছাদুর রহমান সুজন, পৌর বিএনপি নেতা সফিকুল ইসলাম খোকাসহ বসুন্ধরা শুভসংঘ জীবননগর শাখার সদস্যরা। স্বাগত বক্তব্যে বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা নানা উন্নয়নমূলক কাজ করি। দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করা তার মধ্যে একটি। গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় নারীদের খুঁজে বের করে বসুন্ধরা শুভসংঘের তত্ত্বাবধানে তিন মাস বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে যখন তাঁরা দক্ষ হয়ে ওঠেন, বিনামূল্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন উপহার দিই আমরা। তিন বছর ধরে এই কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে তিন হাজারের বেশি অসহায় নারীর মাঝে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘ শুধু সেলাই মেশিন দিয়েই কাজ শেষ করে না। এরপর সেলাই মেশিন পাওয়া নারীদের খোঁজখবরও রাখে। আমরা দেখেছি, অনেকে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন আবার অনেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। আশা করি, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের এই মহতী উদ্যোগের ফলে নারীদের টেকসই উন্নয়ন ঘটবে।’

সেলাই মেশিন উপহার নিতে আসা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের চোখে-মুখে তখন নতুন স্বপ্নের সূচনা। এক টুকরা কাপড় থেকেই তৈরি হবে আত্মনির্ভরতা। উপকারভোগী লিপা খাতুন বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে, এখনো পড়াশোনা করছি। স্বামী সিএনজি চালক। তার একার আয়ে সংসার, বাচ্চার খরচ এবং আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি না। বসুন্ধরা শুভসংঘ যেদিন থেকে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, সেদিন থেকেই স্বপ্ন বুনছি, সেলাই শিখে উপহারের মেশিন দিয়ে রোজগার করব। স্বামীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারব। আজ মেশিন পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। দোয়া করবেন, আমি যেন স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। আমার স্বপ্নপূরণের সারথি হওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’

আরেক উপকারভোগী নেকজান খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। অভাবের সংসারে কোনো টাকা ছাড়াই আপনাদের কাছ থেকে সেলাই মেশিন আর তিন মাসের প্রশিক্ষণ পেয়েছি। এখন আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সংসারে আরেকটি আয়ের পথ খুলবে। আশা করি, একদিন সচ্ছলতার মুখ দেখব।’ সীমান্তবর্তী সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের শারমিন আক্তার রূপা বলেন, ‘আমি গরিব কৃষক পরিবারের সন্তান। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে অনার্স পড়ছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে পাওয়া এই উপহার আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। নতুন আলোর দিশা দেখাবে। সেলাই মেশিনটি শুধু একটি মেশিন নয়, এটি আমার পরিবারের আর্থিক সহায়তার মাধ্যম হবে।’

অতিথি সৈয়দজাদী মাহবুবা মঞ্জুর মৌনা বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের মানবিক কার্যক্রমে বসুন্ধরা শুভসংঘের এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। জীবননগর উপজেলার যে ২০ জন নারী সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সেলাই মেশিন উপহার পেয়েছেন, তাঁরা এখন নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবেন। আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারবেন এবং নিজেদের মর্যাদা নিজেরা অর্জন করতে পারবেন। নারীরা সমাজের অর্ধেক শক্তি। এই শক্তিকে প্রশিক্ষণ ও সুযোগের মাধ্যমে জাগিয়ে তুললে গ্রামীণ অর্থনীতি পাল্টে যাবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগ অনেক প্রশংসনীয়।’

SOURCE : News 24