সম্প্রতি বিবিসির জরিপে প্রভাবশালী শীর্ষ ১০০ নারীর তালিকায় নাম এসেছে একজন বাংলাদেশি নারীর। তিনি হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের ঝাউগড়া গ্রামের সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের একজন সক্রিয় সদস্য তিনি। বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে আলোচনায় আসা ছোঁয়ার কারণেই তাঁর গ্রামের অসচ্ছল নারীদের নিয়ে গড়ে ওঠে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে প্রায় ৪০ অসহায়, অসচ্ছল নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তাঁদের মধ্য থেকেই প্রথম পর্যায়ে ২০ নারীকে দেওয়া হলো বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন। গত ১৭ জুন সকালে ঝাউগড়া গ্রামে আসেন কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ও বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান শেষে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন সেলাই মেশিন। এই মেশিন পেয়ে নারীরা আনন্দে উদ্বেলিত হন।
অনেকেই খুশিতে কান্না করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। তাঁর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান আরো প্রাণবন্ত হয়। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল মনসুর, কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা জুয়েল, কালের কণ্ঠ’র সিনিয়র সহসম্পাদক ও শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, নান্দাইল উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি সোহাগ আকন্দ প্রমুখ।
সেলাই মেশিন পাওয়া হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রুমা আক্তার (৩৫)। অনার্স সম্পন্ন করেও ভাগ্যে জোটেনি কোনো কাজ। অসহায় বাবার পক্ষে টাকা জোগাড় করে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া ছিল কঠিন। বাবাও মারা যান কয়েক বছর হলো। বাবা মারা যাওয়ায় পাঁচ বোন ও এক ভাই নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান রুমা।
সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এক ভাই পিকআপ ভ্যান চালিয়ে হাল ধরেন সংসারের। বিয়েটা আর করা হয়নি রুমার। এখন সেলাই মেশিন পেয়ে কাজ করে নিজেই সংসারের হাল ধরবেন। এমন আরেকজন ময়না আক্তার (২৭)। নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর দুই ভাই দিনমজুরি করে সংসার চালান। সেলাই কাজ জানলেও ইচ্ছা থাকার পরও ক্রয় করা সম্ভব হয়নি একটি মেশিন। এর মধ্যে বসুন্ধরার একটি সেলাই মেশিন পেয়ে এখন ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। স্থানীয় একটি বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে সানজিদা ইসলাম মীম। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। অসুস্থ বাবার আয় দিয়েই সংসার চলে। এখন সেলাই মেশিন পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সে। দিনমজুর শহিদুলের মেয়ে সানজিদা ইসলাম। সেও দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে পড়ালেখা থমকে দাঁড়ানোর উপক্রম হয়েছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি বসুন্ধরার সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেলাই মেশিন পাওয়ার পর পড়ালেখার খরচ জোগাতে এখন আর কষ্ট হবে না বলে জানায় সানজিদা। লামিয়া খাতুনের (১৭) এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল, কিন্তু তার সাহসিকতায় নিজেই বিয়েটা ভেঙে দেয়। ফলাফলে পাসও করে, কিন্তু গৃহপরিচারিকা মা তাঁর মেয়েকে কলেজে ভর্তি করতে পারছিলেন না। পরে শুভসংঘের সহায়তায় কলেজে ভর্তি করেন। এখন বসুন্ধরার একটি সেলাই মেশিন পেয়ে আগামী পথচলার স্বপ্ন দেখছেন। সেলাই মেশিন পাওয়া কলেজছাত্রী পূর্ণিমা রানী বর্মণ জানান, তাঁর বাবা মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কয়েক বছর আগে বাবা মারা গেলে আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সেলাই মেশিন দিয়ে আমি কাজ করে নতুন স্বপ্ন দেখব। টাকা উপার্জন করে সংসারে কিছুটা হলেও অবদান রাখার সুযোগ পাব।’ এসএসসি পাস করলেও টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি অলকা রানী বর্মণ। সে বলে, ‘আমার বাবা মাছ ধরে বিক্রি করতেন। সংসার ছাড়াও ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। প্রায় এক বছর ধরে দৃষ্টি হারানোর পর সংসারে অন্ধকার নেমে আসে। মনে হচ্ছিল, বাবা যেভাবে সব কিছুই অন্ধকার দেখছেন, আমাদের চোখ থাকার পরও অন্ধকার দেখছি। এখন বসুন্ধরার সেলাই মেশিন পেয়ে আলোর পথ দেখছি। এটার আয় দিয়ে সংসার ও পড়ালেখার খরচ জোগানো যাবে।’ সেলাই মেশিন পেয়েছেন কনিকা আক্তার (২৬)। তিনি বলেন, ‘দিনমজুর স্বামীর আয় দিয়েই এত দিন সংসার চইল্যা আইছিন। কিন্তু হঠাৎ স্বামী অসুখ হইলে আয় বন্ধ অইয়া যায়। নিজে কিছুডা সেলাই কামকাজ জানা থাকায় বাড়ির কাছে বসুন্ধরার সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়া আরো সেলাই শিহি। কিন্তু চিন্তা করতাম তারা তো শিহাইব, কিবায় একটা সেলাই মেশিন কিনবাম। এত টেহা তো নাই। যেডা কল্পনাও করছি না, হেই সেলাই মেশিন দিল বসুন্ধরা। আমার অহন আর পিছনে তাহানোর সুযোগ নাই। এত দিন জানতাম বসুন্ধরা আডা (আটা), তেলসহ নানা জিনিস বানায় ও বেচে। অহন দেহি অসহায় মানুষরে তারা সব দেয়। তা-ও আবার বিনা স্বার্থে।’
১০ বছর আগে বাবা মারা যায় ময়না আক্তারের (২৭)। পরের বাড়িতে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন তিনি। যুবতি হওয়ায় নানা বাধার পরেও হাল ছাড়েননি। বেশ কয়েকবার বিয়ের সম্মন্ধ এলেও চাহিদামতো যৌতুক না দিতে পারায় বিয়েটা ভেঙে যায়। পাড়ার লোকজন বিয়ে ভাঙার পড়ে নানা কটূক্তি করে বেড়ায়। তখন থেকেই তাঁর জেদ বিয়ে নয় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। খোঁজ পান বাড়ির পাশেই শেখানো হবে সেলাই কাজ। তা-ও আবার বিনা পয়সায়। এক পর্যায়ে শুভসংঘের পরিচালনায় চালু হওয়া সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এখন তিনি একটি সেলাই মেশিন পেয়ে বেজায় খুশি। তাঁর স্বপ্ন, নিজেই এখন এই মেশিন দিয়ে স্বাবলম্বী হবেন। পরিবারের অন্যদেরও স্বাবলম্বী করবেন।
সভায় উপস্থিত উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা জুয়েল বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের মানবিক কাজকর্ম সম্পর্কে আগে শুনেছি। আজকে নিজে উপস্থিত থেকে যে ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম, তা অকল্পনীয়। আমরা নারী জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা বললেও তা হয়ে ওঠেনি বা করতে পারছি না। কিন্তু বসুন্ধরা অসচ্ছল ও অসহায় নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এটা নজিরবিহীন।’ ইউএনও মো. আবুল মনসুর বলেন, সরকারের উন্নয়নকাজের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজগুলো করছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বে পদার্পণ করতে সহজ হবে বাংলাদেশের। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন বলেন, ‘এটা এক অভাবনীয় ঘটনা। শুভসংঘের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলছে, তা সবার জন্য অনুকরণীয়। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ পরিবারের সবার জন্য অনেক শুভ কামনা। কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বেশ পরিশ্রম করে এই কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছেন। সবার দীর্ঘায়ু কামনা করি।’
কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ও বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় প্রান্তিক নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি। বসুন্ধরা শুধু দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই নয়, সব পর্যায়ে শীর্ষে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে তারা। আজ যে অসহায় নারীরা সেলাই মেশিন পেলেন, তাঁরাই একদিন এই আয় দিয়ে পরিবারে আরেকটি সেলাই মেশিন কিনে দিতে পারবেন। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, স্কুল, পাঠাগার ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র করে দিচ্ছি। অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এবং সম্ভব হলে প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলতে। এরই অংশ হিসেবে আজ শুধু নান্দাইলে সেলাই মেশিন দেওয়া হচ্ছে। দেশে একজন অসহায় নারীও কষ্টে থাকবে না।’
SOURCE : কালের কণ্ঠটঙ্গীতে আগুনে নিহত ৩ ফায়ার সার্ভিস কর্মীর পরিবারের পাশে সায়েম সোবহান আনভীর, চেয়ারম্যান এবিজি
Chairman of ABG Sayem Sobhan Anvir Stands with Families of Firefighters who Lost their Lives in The Tongi Fire
বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ, সচ্ছলতার স্বপ্ন ২ শতাধিক নারীর
Bashundhara Foundation’s Interest-Free Loans Bring the Dream of Prosperity to Over 200 Women
বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে চরফ্যাশনে সেলাই মেশিন বিতরণ
Bashundhara Shuvashangha Distributes Sewing Machines in Charfassion
সড়কের চিত্র বদলে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বসুন্ধরার বিশেষ বিটুমিন
সীমান্তবর্তী নারীদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ
Bashundhara Group Stands Beside Border-Area Women
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় স্বপ্নপূরণের আশা