All news

আনভীরের নেতৃত্বে জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের অপবাদ ঘুচে যাবে’

সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের অপবাদ ঘুচে যাবে

দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির (বাজুস)। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আয়োজিত এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির (বাজুস) নেতারা বলেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের হাত ধরে দেশের জুয়েলারী ব্যবসা স্বর্ণযুগে পা রাখবে। স্বর্ণ রিফাইনারীর কারখানা গড়ার মধ্য দিয়ে দেশে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন দেশের অবহেলিত স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন, অন্যদিকে বিদেশেও নতুন করে পরিচিতি পাবে বাংলাদেশ। বসুন্ধরার এমডির নেতৃত্বে জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের ঘিরে থাকা নানা অপবাদও ঘুচে যাবে। এ সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, প্রায়ই শোনা যায় ভ্যাট-ট্যাক্সের কথা বলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এ খাতের ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত সম্মান দেওয়া হয় না। তাঁদেরকে বেশিরভাগ সময় চোরাচালানিসহ বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হয়। এখন থেকে আমি জুয়েলারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের সকল সদস্যদের সমস্যা সমাধানে আমি কাজ করবো। তাঁদের সম্মানিত করার চেষ্টা করবো। বিদেশে যেমন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সম্মান দেওয়া হয়, সেভাবে যেন আমাদের দেশেও দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা নেব। সারা দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এক ছাতার নিচে আনার ঘোষণা দিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, তাঁদের সুখে-দুঃখে সবসময় থাকবো। বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতিকে একটি সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া হবে। কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে, সবাইকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। কেউ যেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের বাঁকা চোখে না দেখে, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বসুন্ধরা গ্রুপের রিফাইনারীতে উৎপাদিত স্বর্ণ দিয়ে সবার আগে দেশের ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটানোর কথা জানান আনভীর। সেইসাথে বলেন, আগে আমার দেশ, দেশের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের চাহিদা মিটিয়ে তারপর বিদেশে রপ্তানির বিষয়ে চিন্তাভাবনা হবে। অন্য অনেক খাতের মতো এই শিল্পের মাধ্যমে বিদেশে দেশের সুনাম ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আপন জুয়েলার্সের মালিকের বড় ভাই গুলজার হোসেন বলেন, ‘৩৭ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে এখন স্বর্ণ উৎপাদন হবে। সেখান থেকে আমরা কিনে বিক্রি করতে পারবো। আমরা এখন বিদেশ থেকে স্বর্ণএনে বিক্রি করি। আগামীতে বসুন্ধরা গ্রুপ স্বর্ণতৈরির কারখানা করবে। আমাদের জন্য দেশের জন্য গর্বের বিষয়। স্বর্ণ রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান হলে বিদেশ থেকে চোরাই পথে কোন স্বর্ণআসবে না। এটা অনেক আনন্দের বিষয়। বাংলাদেশে বড় একটি বাজার তৈরি হবে। স্বর্ণআমদানি না হয়ে বিদেশে রপ্তানি হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ভাই সঠিক সময়ে সঠিক সিন্ধান্তটি নিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই গোল্ডের ব্যবসা খুবই উন্নতমানের ব্যবসা, এটা রাজকীয় ব্যবসা। আনভীর সাহেবের হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বর্ণযুগে পা রাখবে। বাংলাদেশ এই ব্যবসার মাধ্যমেও সারা বিশ্বে পরিচিতি পাবে। আর এই ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ৬০ লাখ মানুষকে সুখে-দুঃখে তিনি কাছে পাবেন। আমরা চাই আনভীর ভাই জুয়েলারি ব্যবসার একজন অভিভাবক হিসেবে থাকবেন। এই শিল্পকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন। বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন, কখন আপনারা ব্যবসা শুরু করবেন।’ জুয়েলারী মালিক এম এ ওয়াদুদ বলেন, ‘প্রচার আছে স্বর্ণকাররা মায়ের সোনাও চুরি করে। এমন প্রবাদ আছে আমাদের সমাজে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই অপবাদ দূর হলেও চোরাই স্বর্ণব্যবসায়ীর অপবাদ এখন দূর হবে। কারণ বসুন্ধরা যদি স্বর্ণ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করে তাহলেই সেই অপবাদ দূর হবে। আমরা স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা অনেক হয়রানির শিকার হই। পদে পদে বাধার সৃষ্টি করা হয়। স্বর্ণব্যবসায়ী শুনলেই একটি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে মানুষ। তবে বসুন্ধরার মতো প্রতিষ্ঠান স্বর্ণব্যবসায় আসলে এবং আনভীর সাহেব আমাদের নেতৃত্বে এলে আশা করি সেই হয়রানি থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাবেন। আমরা সবাই খুশি, বিশেষ করে আমি ভাবতেও পারিনি যে আমার জীবদ্দশায় বাংলাদেশে স্বর্ণের কারখানা হবে, আমাদের দেশে স্বর্ণতৈরি হয়ে বিদেশে রপ্তানি হবে। বসুন্ধরা যেখানে হাত দেয় সেখানেই সোনা ফলায়। ঠিক তেমনি এই স্বর্ণ ব্যবসায়ও বসুন্ধরা সফলতা পাবে। এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এইখাতে দুর্নাম হয়ে যাচ্ছে যে এরা স্বর্ণ চোরাচালানি করে থাকে। এই ব্যবসায় স্মাগলার একটি পরিচিত শব্দ। গোল্ড ব্যবসায়ীদের সরকারি আমলারা অনেকেই ছোট করে দেখে। তবে এখন আমরা আশার আলো দেখছি, বসুন্ধরা গ্রুপ স্বর্ণ তৈরির ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে। দেশেই তৈরি হবে সোনা। আনভীর সাহেবের হাত ধরেই দেশের বাজারে স্বর্ণের নতুন যুগে পা দিবে। সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণব্যবসায়ীদের গায়ে লেগে থাকা স্মাগলার শব্দটিও চিরতরে বিলীন হবে। কারণ বসুন্ধরা গ্রুপের কারখানা থেকেই জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ এবং অলংকার কিনে দোকানে বিক্রি করতে পারবেন। পাশপাশি স্বর্ণের বারগুলো যখন বিদেশে যাবে তখন সেটা বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একজন ব্যক্তিকে এই ব্যবসায় পাচ্ছি, যিনি থাকলে সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা আমাদের হয়রানি কিংবা ছোট করতে পারবে না। আমরা মাথা উঁচু করে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবো। জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা আনভীর ভাইয়ের মতো একজন অভিভাবক চাই। যিনি আমাদের মাথার ওপর ছাতা হয়ে থাকবেন। জুয়েলারী সমিতির সাবেক সভাপতি ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ রায় বলেন, ‘আমরা যাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি, শত হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখছি, সেই আনভীর ভাই আমাদের পরিবারের সদস্য হয়েছেন। দেশের উন্নয়নের যিনি নীরবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। যাঁকে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানের মতো স্নেহ করেন। তিনি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রেরও সভাপতি হওয়ার পর খেলাধুলায় যেভাবে বিপ্লব ঘটেছে, ঠিক একইভাবে জুয়েলারী সমিতির সভাপতি হলে এই শিল্পেরও বিপ্লব ঘটবে। দীর্ঘদিনের সোনা চোরাচালানির অপবাদ ঘুচাতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আনভীর ভাইয়ের মতো একজন মানুষ আমাদের খুবই দরকার। সত্য রঞ্জন সাহা বলেন, আমাদের বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির নেতৃত্বে আনভীর ভাই আসছে, এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার। এই সেক্টরে এখন অবহেলার দৃষ্টিতে দিন কাটাই। আমাদের সবার উচিত হবে। আনভীর ভাইয়ের হাতকে শক্তিশালী করতে পারলে আমরা সবাই শক্তিশালী হবো। আমাকে দিকে তাকিয়ে কেউ অপবাদ দেয়ার সাহসও পাবে না। আগামী দিনে আমাদের সমিতির সভাপতি পদে দেখার প্রত্যাশা করি। জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়াল বলেন, আমি সাড়ে ৫ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এখানে দেখেছি এই সেক্টরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক বেশি। আমাদেরকে অনেকেই চোরাই স্বর্ণের ব্যবসার অপবাদ দিচ্ছে। এই সেক্টরের অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে আমরা আনভীর ভাইকে সঙ্গে চাই। আপনি সামনে থেকে এই সেক্টরের নেতৃত্ব দিবেন। আমাদের জুয়েলারী সেক্টরের সবাই আপনার পাশে থাকবে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ে যেমন সুনাম বয়ে এনেছেন, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের জুয়েলারী সেক্টরেও আনতে পারবেন। আপনার নেতৃত্বে আমরা সবাই কাজ করবো, আগামী পথচলা চলতে চাই। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বসুন্ধরা গ্রুপ যদি একটি সেক্টরে আসে, তাহলে অবশ্যই বদলে যাবে নতুন আলো আসবে। আগামী পথচলায় আপনি অভিভাবক হিসেবে থাকবেন।’ সমিতির বর্তমান সভাপতি ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দোলন খান বলেন, সত্যিই আমি গর্বিত যে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীর ভাইয়ের মতো একজন বড় মাপের মানুষকে সদস্য করতে পেরেছি। এর আগে এত বড় মাপের মানুষকে আমার হাত দিয়ে জুয়েলারী সমিতির সদস্য করতে পারিনি। আমার জীবনের আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা আমি একজন ব্যক্তির কাছে দায়িত্বটা হস্তান্তর করবো সেটাও একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। ১৯ হাজার জুয়েলারী ব্যবসায়ীর শ্রম-ঘামে আজকের এই শিল্প এখানে এসেছে। বিজিএমইএ, বিকেএমই এর মতো আমাদের হতে হবে। ভারতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সে দেশের সরকার সম্মান দেয়, ক্রেষ্ট দেয়। কিন্তু আমাদেরকে চোরের অপবাদ দেয়। এটা থেকে মুক্তির উপায় নিশ্চয়ই আপনার মাধ্যমে হবে।