পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের অতিদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রুমা আক্তার। বাবা আব্দুল কুদ্দুস দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকম পরিবার চালান। রুমার বয়স তখন সবে ১৩ বছর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ তাঁর। তখনই রুমার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। পরিবার থেকে বিয়ে ঠিক করা হয়। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক।
বরও আসবে বলে সময় গণনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখনই ঘটল সবচেয়ে আনন্দের ঘটনাটি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আগেই সব কিছু জানিয়ে রেখেছিলেন রুমা। দলবল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে হাজির হন প্রধান শিক্ষক।
তাঁর মা-বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করান। ভেঙে যায় রুমার বাল্যবিবাহ। শুরু হয় বেঁচে থাকার নতুন গল্প। এর পর থেকেই প্রচুর পরিশ্রম করে পড়াশোনা শুরু করেন রুমা।
স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে সম্পন্ন করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। একটি সেলাই মেশিনও পেয়েছেন। এই সেলাই মেশিনেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন রুমা। শুনিয়েছেন স্বাবলম্বী হয়ে নতুন জীবন শুরুর নানা স্বপ্নের কথা। রুমা বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় প্রতিনিয়তই নানা সংকটে পড়তে হয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকেছি অনেক দিন। তার পরও পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পড়াশোনা জানি বলে কাজ শিখতে পেরেছি খুব সহজেই। এখন স্বাবলম্বী হতে চাই। উদ্যোক্তা হয়ে অন্য আরো অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের মতো অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ।’
রুমার মতো পাবনার তিনটি উপজেলার এমনই অসহায় ৫০ নারীকে স্বাবলম্বী করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাঁদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন শুভসংঘের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। ভাঙ্গুড়া উপজেলায় সেলাই মেশিন তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন ও পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল। সুজানগরে সেলাই মেশিন বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। চাটমোহরে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ।
মকবুল হোসেন বলেন, অতিদরিদ্র অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করলে দেশ এগিয়ে যাবে। সরকারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে তাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের তৈরি করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রত্যেককে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে। এই মেশিনে কাজ করে নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এমন মহতী কাজের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।’ ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ শুভসংঘের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সমাজে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, যে আলোয় আলোকিত হচ্ছে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সারা দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় পাবনার তিন উপজেলার ৫০ অসচ্ছল নারীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই মেশিনের চাকার সঙ্গে ঘুরবে তাঁদের ভাগ্যের চাকা। এটি তাঁদের ভাগ্যবদলের হাতিয়ার। এটি ব্যবহার করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন অসচ্ছল নারীরা। দরিদ্র শিশুরা যাতে শিক্ষায় পিছিয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে সুজানগরে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুজানগর, ভাঙ্গুড়া ও ঈশ্বরদীতে তিনটি পাঠাগার স্থাপন করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। পুরো কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায়।’
এর আগে সুজানগর উপজেলার ২০ জন, ভাঙ্গুড়া উপজেলার ১৫ জন এবং চাটমোহর উপজেলার ১৫ জন অতিদরিদ্র নারীকে তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি খুঁজে এই নারীদের বাছাই করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের জীবনের গল্পের প্রতিটি পাতাই বিষাদ আর দুঃখমাখা। এমনই একজন চাটমোহর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা শাপলা খাতুন। তিন বছর আগে পাশের উপজেলার এক দিনমজুরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর স্বামীর অসহনীয় নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন, তবু স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করেননি। কিন্তু একসময় স্বামীই শাপলাকে ছেড়ে দেন। বৃদ্ধ বাবার কাছে আশ্রয় হয় তাঁর। সঙ্গে দেড় বছরের সন্তান। সব কিছু হারিয়ে যখন শাপলা গভীর অমানিশায় নিমজ্জিত, তখনই আলোর রোশনাই হয়ে শাপলার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। এখন স্বনির্ভর হয়ে সুন্দর ও সাবলীলভাবে চলার স্বপ্ন দেখেন শাপলা। শাপলার মতো হাসি খাতুন, আরিফা খাতুনরাও সেলাইয়ের সুতায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই স্বপ্ন স্বনির্ভর হওয়ার। তাঁদের জীবনে একটি আলোকিত অধ্যায়ের সূচনা করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। অতিথিদের আশা, শুভসংঘের মাধ্যমে এভাবেই জনপদ থেকে জনপদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে বসুন্ধরা গ্রুপ।
SOURCE : কালের কণ্ঠHospital for Covid-19 Patients at Bashundhara’s ICCB to Open Soon
মীরসরাই এবং কেরানীগঞ্জে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরা গ্রুপ কাপ গলফ টুর্নামেন্ট ২০১৩ গলফারদের উৎসব
Dazzling Finish of Bashundhara Cup Golf Tournament 2013
Bashundhara Group Exporting Tissue to 16 Countries
Bashundhara Group Chairman Stands by Ailing Girl
Bashundhara Group Chairman Ahmed Akbar Sobhan Stands by Sick Tasmia
India Willing Partner in Bangladesh Development
Bashundhara Group Chairman Stands by Ailing Boy Siraj
Ceremony of Bashundhara Cup Golf