সেরা বসুন্ধরা এলপি গ্যাস

‘আলোর পথে আরো এগিয়ে’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক মেলা গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই মেলার শেষ দিন ছিল সাধারণ দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর। এবার মেলায় জ্বালানি বিভাগে শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়নের পুরস্কার পেয়েছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস।
এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা প্যাভিলিয়নের পুরস্কার পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও সাইফ পাওয়ার টেক। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য স্টলগুলো হলো বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কম্পানি লিমিটেড, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ও টোটাল গ্যাস।
মেলায় বসুন্ধরার প্যাভিলিয়ন। ছবি : কালের কণ্ঠ
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়সহ সততা ও সাহসিকতার জন্য এ বছর শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎ কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন ডিপিডিসির সচিব মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এবারের মেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পানিসহ ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০৩টি স্টল ছিল। বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের স্টলটিতে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য উপযোগী বিভিন্ন সাইজের সিলিন্ডার ছাড়াও যানবাহনে ব্যবহূত সিলিন্ডার প্রদর্শন করা হয়। সিলিন্ডার থেকে প্রয়োজনমাফিক গ্যাস পাওয়ার জন্যও রয়েছে ভ্যাপারাইজার। এ ছাড়া রয়েছে অটো গ্যাস কনভার্সনের নানা ধরনের কিটস।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের স্টল ঘুরে জানা যায়, সিএনজির তুলনায় এলপিজি বা এলপি গ্যাস অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ। প্রতি ঘনমিটারে সিএনজিতে যেখানে সাত থেকে আট কিলোমিটার যাওয়া যায়, সেখানে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসে যাওয়া যাবে ১০ কিলোমিটারেরও বেশি। একই সঙ্গে ৪৫ ঘনমিটার গ্যাসের একটি সিলিন্ডারে চলবে ৪৫০ কিলোমিটার। এ রকম সাইজের গ্যাসভর্তি একটি সিলিন্ডার নিতে পারলে পুরো সপ্তাহ পার করা যাবে। এই সিলিন্ডারের ওজন সিএনজি সিলিন্ডারের তুলনায় অর্ধেক।
এবার মেলা উপলক্ষে চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। যার দুটি বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে, বাকি দুটি বিদ্যুৎ ভবনে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সাফল্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরার জন্য এ মেলার আয়োজন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
দেশে কিভাবে ১০০টিরও বেশি বিদ্যুেকন্দ্রে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদিত হচ্ছে তা মেলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কিভাবে ২০২১ সালের মধ্যে মোট ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন করা হবে তা প্রদর্শিত হয়।
মেলার শেষ দিনে জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ডেসকোর স্টল ঘুরে জানা যায়, ঢাকা ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাই কম্পানির (ডেসকো) মিটার রিডিং এখন অনলাইনে গ্রাহকরা ঘরে বসে দেখতে পারবে। শুধু অনলাইনে ঘরে বসে গ্রাহক ডেসকোর মাসিক বিলই দেখতে পারবে তা নয়, অনলাইনে তা পরিশোধও করতে পারবে। ডেসকোর গ্রাহকরা অনলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিনের বিদ্যুৎ খরচের হিসাব, মিটার রিডার অনুযায়ী রিপোর্টসহ একাধিক প্রতিবেদন দেখতে পারবে। এরপর বিল পরিশোধের পর তা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে চলে আসবে। এখন একটি এলাকায় এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ১৫টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে প্রকল্পটি চালু করা হবে। ডেসকোর মতো এ রকম চমক পেয়েছে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানি (ডিপিডিসি) এলাকার গ্রাহকরা। ডিপিডিসির স্টলে এসে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করলে তাত্ক্ষণিকভাবে সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নজরুল হাসান বলেন, ‘গ্রাহকদের উন্নত সেবার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে অভিযোগ শোনারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
মেলায় ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির স্টল ঘুরে জানা যায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে তারের প্রয়োজন হবে না। তার ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এখন এক থেকে তিন মিটার দূরত্বে তার ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি আরো উন্নত করতে পারলে আরো দূরে তারবিহীন বা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। আর বিনা তারে জ্বলবে লাইট, চার্জ হবে মোবাইল ফোনসেট, ক্যামেরা, চিকিৎসা সরঞ্জাম। নতুন এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা, এ এস এম মহিবুল্লাহ চৌধুরী, প্রশান্ত কুমার দাস এবং নাজমুস সারওয়ার। এ প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতা চান তাঁরা।
পুরস্কার পেলেন মুনীর চৌধুরী : ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশনের (ডিপিডিসি) অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ চুরি উদ্ঘাটন, বকেয়া বিল আদায় ও গ্রাহক হয়রানি হ্রাস করায় এ বছর শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎ কর্মকর্তা পুরস্কার পেয়েছেন ডিপিডিসির সচিব মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসিতে বেপরোয়া বিদ্যুৎ চুরি, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি হ্রাস এবং প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসন ক্যাডারের সফল কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরীকে আরেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা থেকে নিয়ে আসা হয়। মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে বড় ধরনের অভিযান শুরু হলে এক বছরেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব বেড়ে যায় ৫০৩ কোটি টাকা। এর আগের বছরে যেখানে ডিপিডিসি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল চার হাজার ১৮১ কোটি টাকা সেখানে গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এ অর্থের বেশির ভাগ এসেছে বকেয়া বিল আদায় থেকে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতেও তিনি অভিযান শুরু করেন। কমে আসে গ্রাহক হয়রানিও।
জানা গেছে, ডিপিডিসির টাস্কফোর্সের এই সাফল্য বিদ্যুৎ বিভাগের অন্যান্য কম্পানি ও প্রতিষ্ঠানে মডেল হিসেবে নেওয়ার কথা বলেছেন বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার ইসলাম। গত ২২ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় মুনীর চৌধুরীর টাস্কফোর্স অভিযানকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করার জন্য ডেসকো, পিডিবিসহ অন্য সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার ইসলাম।