রানার্স-আপ ট্রফি শেখ রাসেলের

লিগের শেষ ম্যাচে রহমতগঞ্জকে হারিয়েই রানার্স-আপ ট্রফি নিশ্চিত করল শেখ রাসেল। এই ম্যাচে হার বা ড্র হলেই তাদের দ্বিতীয় স্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। কিন্তু রাসেল সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচটা জিতেছে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে। পল এমিলের হ্যাটট্রিকেই ম্যাচটা মুঠোয় চলে আসে তাদের। অসাধারণ এক গোলে শুরুটা অবশ্য করেছিলেন অধিনায়ক মিঠুন চৌধুরী।
গতকালের হ্যাটট্রিকসহ এবারের আসরে পল এমিলের লিগে নিজের ১০ গোল। পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার নন কিন্তু আসরজুড়েই রাসেলের প্রাণ হয়ে ছিলেন এই ক্যামেরুনিয়ান ফরোয়ার্ড। মিঠুন নিজে স্ট্রাইকার, কিন্তু তিনি দলের প্রয়োজনে কখনো প্লেমেকার, কখনো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলেছেন। কাল স্ট্রাইকার জাহিদ হাসানের সঙ্গে অনবরত জায়গা বদল করছিলেন মিঠুন। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে বক্সের বাইরে বল পেয়ে দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ভেতরে ঢুকেই মিঠুন নিয়েছেন জোরালো শট। আর তাতেই লিড পায় শেখ রাসেল। প্রথম পর্বে শীর্ষে থাকা শেখ জামাল দুই ম্যাচ হাতে রেখেই তা নিশ্চিত করে ফেলার পর শেখ রাসেলের লড়াই শুরু হয় দ্বিতীয় স্থানের জন্য। কিন্তু মিঠুনের পর ৫৭, ৬২ ও ৭০ মিনিটে পলের টানা তিন গোলে ট্রফি নিশ্চিত করেছে শেখ রাসেল। আর তাতে নিছকই মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়ায় সন্ধ্যার আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটি।
‘জিততেই হবে’ এমন সমীকরণে শুরুতে কিছুটা জড়োসড়ো হলেও মিঠুনের ওই গোলেই চাপ পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলেন শেখ রাসেলের খেলোয়াড়রা। দ্বিতীয়ার্ধে কিংসলে চিগোজির জায়গায় নেমে আক্রমণে ধার বাড়ান জাহিদ হোসেন। ৫৭ মিনিটে তাঁর কর্নার থেকেই হেডে ব্যবধান ২-০ করেছেন পল। তৃতীয় গোলের মিনিট চারেকের মধ্যেই। বাঁ দিক থেকে মিঠুন চৌধুরীর বাড়ানো ক্রসে বল জালে পাঠিয়েছেন ক্যামেরুনিয়ান ফরোয়ার্ড। রহমতগঞ্জ ততক্ষণে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে। দলটি প্রথম পর্বে ১-১ গোলে ড্র করেছিল শেখ রাসেলের সঙ্গে। কাল ছন্দে ফেরা শেখ রাসেলের সঙ্গে তারা আর পেরে ওঠেনি। ৭০ মিনিটে একাই বল নিয়ে বক্সে ঢুকে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করার পাশাপাশি দলের রানার্স-আপ ট্রফিটাও নিশ্চিত করেছেন পল এমিল। ম্যাচ শেষে মাঠেই সেই ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস করেছেন শেখ রাসেলের খেলোয়াড়রা।
এবার মৌসুমের অন্যতম সেরা দলই গড়েছিল শেখ রাসেল। স্থানীয়দের মধ্যে অন্যতম সেরা জাহিদ হাসান, জাহিদ হোসেন, হেমন্ত ভিনসেন্টরা ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন। শক্তিশালী শেখ জামালের সঙ্গেও তাদের লড়াই হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। ১৪ ও ১৫তম রাউন্ডে টানা দুটি হারেই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়ে তারা। তবে তাতেও তৃতীয় বা চতুর্থ নয়, আবাহনী-মোহামেডানের মতো দলকে পেছনে ফেলে রানার্স-আপ হয়েছে তারা। ২০ ম্যাচে শেখ রাসেলের পয়েন্ট ৪২, জয় ১৩ ম্যাচে, ড্র তিনটি। দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় জাহিদ হাসান রানার্স-আপ হওয়াটাকেই কম কৃতিত্বের মনে করছেন না, ‘চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ভাগ্যেরও প্রয়োজন হয়। সেটিই হয়তো আমাদের পাশে ছিল না। নইলে দ্বিতীয় পর্বে শেখ জামালের বিপক্ষে ম্যাচটাতে আমরা জয়ের অবস্থাতেই ছিলাম। দুর্ভাগ্য ওই ম্যাচটা ৪-৩ হেরেছি। তাতেই আসলে শিরোপার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তবে রানার্স-আপ হওয়াটাও কম অর্জন নয়। লিগের অন্যতম সেরা দল হিসেবেই কিন্তু আমরা এই ট্রফিটা পেয়েছি।’ ২০১২-১৩ মৌসুমে ট্রেবল জেতা দলটি গত মৌসুমে ধুঁকছিল খেলোয়াড় সংকটে। কোনো শিরোপাই তারা জিততে পারেনি। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান দায়িত্ব নিয়েই এই মৌসুমে শেখ রাসেলের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। ‘চ্যাম্পিয়ন দল’ গড়ে প্রিমিয়ার লিগের আসরটিকেই তিনি আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন। ফুটবলের স্বার্থে সেটিও কম প্রাপ্তি নয়। আগামী মৌসুমে আরো শক্তিশালী চেহারাতেই তাদের ফেরার কথা। চ্যাম্পিয়ন না হলেও রানার্স-আপ ট্রফি জিতে সেই দাবিটা তারা এখনই জানিয়েও রাখল।
শেখ রাসেল : লিটন; সোহেল রানা, তপু বর্মন, আতিকুর রহমান, ওয়ালি ফয়সাল; হেমন্ত ভিনসেন্ট, জিন জুলস ইকাঙ্গা, মিঠুন চৌধুরী; জাহিদ হাসান, পল এমিল, কিংসলে চিগোজি (জাহিদ হোসেন)।