মোংলা অর্থনৈতিক জোনে ব্যাগ প্লান্ট করবে বসুন্ধরা

মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাগ প্লান্ট স্থাপন করবে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরা। এ লক্ষ্যে ১৬ একর জায়গায় প্লান্ট স্থাপনে শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন (প্রাইভেট) লিমিটেডের সঙ্গে ভূমি লিজ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড (বিআইসিএল)।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল রবিবার দুপুরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ও পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন লিমিটেডের গ্রুপ ডিরেক্টর জন হক শিকদার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরে জন হক শিকদারের হাতে চেক তুলে দেন সায়েম সোবহান আনভীর।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। এ ছাড়া বেজার নির্বাহী সদস্য হারুনুর রশিদ এবং দুই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চুক্তির আওতায় বিআইসিএল নিজস্ব চাহিদা মেটাতে ১৬ একর জমিতে ব্যাগ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করবে।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘করোনা সংকটে কাজ তো থেমে থাকবে না। কাজ চালিয়ে যেতে হবে। প্রাইভেট ইকোনমিক জোন মোংলায় ১৬ একর জায়গা নিয়েছি। সেখানে ব্যাগ উৎপাদন করা হবে। এ ছাড়া আমাদের আরো কিছু পরিকল্পনা আছে অয়েল ডিপো করার জন্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এর একটি কেরানীগঞ্জে, আরেকটি চট্টগ্রামে। আরো বেশ কয়েকটি ইকোনমিক জোনের চেষ্টা করছি। সব জায়গায় আমরা ব্যবসার উন্নয়ন করব।’
জন হক শিকদার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বসুন্ধরা গ্রুপ এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখবে।’
পবন চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় সব কিছুতে প্রভাব পড়লেও অর্থনৈতিক জোনে গত তিন মাস ধরে উন্নয়নকাজ চলছে। সবই অব্যাহত রেখেছি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, যেটা সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল, সেখানে এখন দেশি-বিদেশি ঠিকাদাররা কাজ করছেন। জমির উন্নয়ন চলছে। রাস্তার উন্নয়নকাজ চলছে। শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। করোনাকালে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজে যেন ক্ষতি না হয় সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘করোনার সময় জীবন ও জীবিকার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, অর্থনীতি সচল রাখার যে প্রয়াস, সেটার প্রতিফলন অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়নকাজেও দেখেছি। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিবেশগত কারণে একটা সমস্যা ছিল। একটা মামলার কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলাম। সরকার এরই মধ্যে সেখানে পলিসি ঘোষণা করেছে। লাল ক্যাটাগরির শিল্প ছাড়া বাকি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যাবে। সেখানে কাজ চলছে। মোংলায় বিনিয়োগের জন্য ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে আজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এর মধ্য দিয়ে শিল্প স্থাপন আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। দুটি প্রতিষ্ঠিত গ্রুপের মধ্যে চুক্তি হলো, সবাইকে অভিনন্দন। যে উদ্দেশ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হলো সেটা যেন হয়। বেজার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
বেজার সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মডেলে ২০৫ একর জমিতে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে। পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন লিমিটেড দেশের প্রথম কম্পানি যাকে নকশা, নির্মাণ, অর্থায়ন, মালিকানা গ্রহণ, পরিচালনা ও হস্তান্তরের ভিত্তিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ৫০ বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৌশলগত অবস্থানের কারণে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটির অবস্থান মোংলা সমুদ্রবন্দরের এক কিলোমিটারের মধ্যে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত খানজাহান আলী বিমানবন্দর হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে। পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে সড়ক ও রেলের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ সহজতর হবে। যোগাযোগের এই সুবিধা মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মোংলা বন্দরের চাহিদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।