বিশেষ শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার আয়োজন

‘প্রজাপতি এ মন মেলুক পাখনা/দূরে যত দূরে যায় যদি যাক না/সোনালী রোদ আঁকে আলপনা/স্বপ্ন ভেসে ভেসে যায় যাক না’ গানের তালে নাচছে চৈতি। আবার ‘ঢেঁকি নাচে ঢাপুর ঢাপুর/আর কি নাচে সই/পায়ে বাজে সোনার নূপুর/আর কি বাজে সই’ গানের তালে নেচে চলে মিমি। তবে চৈতি ও মিমির চেয়ে একধাপ এগিয়ে কৌশিক। নাচের সঙ্গে দৌড়ের পাল্লায়ও সে সবাইকে ছাড়িয়ে। আর সাদিয়া আরেফিন তিশা নাচের পাশাপাশি আঁকা-আঁকিতেও পারদর্শী। নৈপুণ্য দেখে বোঝার উপায় নেই যে ওরা বিশেষ শিশু। আর এমন সব প্রতিভাবান ‘বিশেষ’ শিশুকে নিয়েই গতকাল বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা গ্রুপ আয়োজন করেছিল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসব ‘উইন্টার ক্যাম্প উইথ নেশন চাইল্ড’।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সকাল ১০টায় বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ও গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজা বেগম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (বিডিজি) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন, ভাইস চেয়ারম্যান দিলারা মোস্তফা, বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম পরিচালক ও উইন্টার ক্যাম্প উইথ নেশন চাইল্ডের উদ্যোক্তা ইয়াশা সোবহান নাবিলা, কালের কণ্ঠের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা আই হাসপাতালের সামনে (ব্লক আই) এই উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ও সুইড বাংলাদেশ। এতে ছিল বয়সভিত্তিক চার ধরনের দৌড়, দুই ধরনের চিত্রাঙ্কন, সফট বল থ্রোয়িং, নাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবছরই বিশেষ দিবসে এমন আয়োজন করা হবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইয়াশা সোবহান বলেন, ‘আমি আমার নেশন চাইল্ডদের বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই। বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চাই, তোমরাই পারবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে একেকজন বীর সৈনিক হতে। তোমাদের পথচলা আরো অনেক সুন্দর হোক, এ কামনা করি।’ তিনি বলেন, ‘দেশের এই স্পেশাল মানুষদের জন্য কিছু করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমি তোমাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমাদের নেশন চাইল্ড হিসেবে।’
ইয়াশা সোবহান তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি সুইড বাংলাদেশের সব সদস্য ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুন্দর এই আয়োজনের উদ্যোক্তা ইয়াশা সোবহান ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ নেশন চাইল্ড’-এর ওয়েবসাইট (http://bgnationchild.com) এবং ফেসবুক পেজের (Facebook//bgnationchild.com) লোগো উন্মোচন করেন।
শিশুদের দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। এরপর ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ১০টি ইভেন্টে সুইড বাংলাদেশের ১১টি শাখার ১৫৫ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। নাচের প্রতিযোগীদের একজন সাদিয়া আফরিন তিশা। ওর মা নার্গিস নাহার বলেন, ‘আমার মেয়ে বুদ্ধিতে একটু কম। বাকি সব কিছুতে এত সুনিপুণ যে প্রথম দেখায় কেউ তাকে বিশেষ শিশু হিসেবে মনেই করতে পারবে না। তিশা ভালো নাচে, ভালো গায়। শুধু নাচেই এ পর্যন্ত ছয়টি পুরস্কার পেয়েছে সে।’ তিনি বলেন, ‘তবে বসুন্ধরা গ্রুপের এমন আয়োজনে এসে আমার মেয়েকে আগের চেয়ে অনেক উচ্ছল মনে হয়েছে। এমন আয়োজন নিয়মিত করা হলে ওদের জন্য তা খুবই ভালো হবে।’
তানভীর বরাবরই মায়ের খুব বাধ্য ছেলে। মায়ের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। শুধু ঢোলের আওয়াজ শুনলে তাকে আর আটকানো যায় না। বাদ্যের তালে তালে খুব ভালো নাচে সে। ভালো নাচের কারণে শুধু দেশে নয়, বিদেশ থেকেও বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে তানভীর। ওর মা শামীমা আফরোজ বলেন, ‘আমার ছেলের বুদ্ধি একটু কম। তবে অন্য দশটা ছেলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমি আশাবাদী, একসময় আমার ছেলে খুব ভালো একজন নৃত্যশিল্পী হবে।’
গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ‘উইন্টার ক্যাম্প উইথ নেশন চাইল্ড’ শীর্ষক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুদের সঙ্গে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও অতিথিরা। ছবি : কালের কণ্ঠ
বিশেষ শিশুদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে সালেহীন কবির কৌশিক। কৌশিক দেশের অন্যতম একজন সেরা দৌড়বিদ হবে বলে মনে করেন মা নার্গিস সুলতানা কাজল। তিনি বলেন, ‘বিশেষ শিশুদের এমন আয়োজন নিয়মিত করা হলে ওরা আরো ভালো করতে পারবে। কারণ শিশুরা কাজের মধ্যে থাকলে অনেক প্রতিবন্ধিতা জয় করা সম্ভব হবে। তবে এসব শিশুর জন্য এমন সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। সত্যিকারের নার্সিং করা হলে দেশের বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত হবে ওরা।’
বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় ক্রীড়া উৎসবের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। জয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজা বেগম ও পরিচালক ইয়াশা সোবহান নাবিলা। এ সময় আফরোজা বেগম বলেন, ‘নেশন চাইল্ডের সঙ্গে এটা আমার প্রথম পরিচয়। বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় তোমাদের পাশে থাকবে। তোমরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক এগিয়ে যাবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আবারও বলছি, আমরা পাশে থেকে তোমাদের সহযোগিতা করব।’
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসবে আরো উপস্থিত ছিলেন বিডিজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহীউদ্দীন, পরিচালক রাবেয়া মেহের মাহমুদ, সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন, উপপরিচালক কাজী বিলকিস বেগম প্রমুখ।