বাইক-গাড়ির বাহারি মডেল দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

জাপানি সুজুকি ব্র্যান্ডের নীল রঙের একটি মোটরবাইক জিক্সার। দেখলেই কেমন যেন চোখ আটকে যাওয়ার একটা ব্যাপার রয়েছে। যারাই দেখেছে, এর ওপর বসে একটা ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারছে না। লাইনে দাঁড়িয়ে অনেককেই ছবি তুলতে দেখা গেল। ছবি তোলা শেষে আগ্রহীরা জেনে নিচ্ছে বাইকটির বিভিন্ন ফিচার। এর পাশেই রয়েছে একই সিরিজের আরো দুটি মডেল। একটি ডুয়াল কালার কম্বিনেশন এবং অন্যটির সঙ্গে লাগানো আছে ফ্যাশনেবল কিছু বডি কিড। ১৫৫ সিসির এসব বাইকের খুঁটিনাটি পার্থক্যগুলোও মন দিয়ে দেখছে দর্শনার্থীরা।
এটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত মোটর বাইক শোতে সুজুকির স্টলের একটি খণ্ডচিত্র। গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত হয় ১২তম ঢাকা মোটর শো-২০১৭। ছুটির দিন হওয়ায় প্রদর্শনীতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঠিক পাশের স্টলেই নতুন একটি ব্রান্ডের স্পোর্টস বাইক এপ্রিলা আরএস৪-১২৫। সাদা, কালো, হলুদ ও অ্যাশ রঙের চারটি গাড়িই সাজানো রয়েছে। গ্রামীণ মোটরস, গার্ডেন মোটরস, এটলাস বাংলাদেশ, স্পিডোজের কিওয়ে-১৫২ ক্যাফে রেসার ও টিএনটি-১৫০, রাসেল ইন্ডাট্রিজের লিফান ও পিউর রেসিং, ভিক্টর এবং আকিজের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল, গুডহুইলের অ্যাভাটর স্পোর্টস কার ও অ্যাভাটর স্কুটি এবং অন্যান্য বাইক ও স্কুটিগুলো নজর কারছে গ্রাহকদের।
সুজুকির স্টলের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. ফাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাইকগুলোর ডিজাইন করা হয়েছে মূলত তরুণদের টর্গেট করে। দাম এবং মানের সমন্বয়ের কারণেই তাদের মধ্যে এই তিনটি মডেলই বেশ জনপ্রিয় বলে জানালেন তিনি।
প্রতিটি ব্র্যান্ডই নিজস্ব স্টইলে একেকটি বাইকের ওপর ছাড় দিচ্ছে। কেউ ২০-৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ব্যাক, কেউ ফ্রি রেজিস্ট্রেশন, হেলমেটে ছাড় দিচ্ছে। অনেক ব্র্যান্ড তাদের বাইক বাজারে জনপ্রিয় করতে দুই বছরের ওয়ারেন্টি এবং পাঁচ বছরের সার্ভিসিং পর্যন্ত দিচ্ছে।
গুডহুইলের সেলস এক্সিকিউটিভ অ্যাভাটরের বিষয়ে জানালেন, তাঁরা স্বল্প মূল্যের মধ্যে বাইক ও স্কুটি ডিজাইন করেছেন। প্রতিটি বাইকের ইঞ্জিনে দুই বছরের ওয়ারেন্টি এবং ছয়টি অথবা ২০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত ফ্রি সার্ভিসিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত তরুণ আশিকুর রহমান প্রদর্শনীতে এসেছেন কয়েক বন্ধু মিলে। নতুন মডেলের কী বাইক রয়েছে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তিনি বললেন, মেলায় এলে অনেক কম্পানির কাছাকাছি সুবিধার বাইকগুলোর মধ্যে তুলনা করা যায়। ফলে বাইক কিনতে সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সুবিধা হয়। এ জন্যই এখানে এসেছি।
কনভেনশন সিটির ১ নম্বর হলে প্রদর্শিত হচ্ছে বিভিন্ন মডেলের কার। প্রগতির সাদা ও খয়েরি রঙের ল্যান্ড ফোর্ড স্পোর্টস-৪ডাব্লিউডি, টয়োটার ইয়ারিস, ভায়োস, অ্যাভেঞ্জা এবং ল্যান্ড ক্রুজার, সাত কালারের মাহিন্দ্রর এসইউভি-৫০০, টাটার ইন্ডিগো ইসিএস, নিটল-নিলয়ের টাটা জিনন ক্রিউ ক্যাব, হেভাল ব্র্যান্ডের হ্যাভাল-২, হোন্ডার অ্যাকর্ড এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ বলে জানালেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে লাল রঙের অ্যাকর্ড, হেভাল-২, হ্যাভাল এইচ-৯ এবং নাভানার ভায়োস ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে বলে জানা গেল। এ বিষয়ে এসিই অটোসের সিইও আজহারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খুবই অত্যাধুনিক একটি কার হলো হ্যাভাল টু। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার মতো যথেষ্ট প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি গাড়ি এটি। মেলা উপলক্ষে আমরা কিছুটা ছাড়েও দিচ্ছি।’
প্রতিটি গাড়িতেই ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে টাটার ইন্ডিগো তিন লাখ টাকা ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। আবার হ্যাভালের এইচ-টু এবং এইচ-৬ এক লাখ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৬ লাখ ও ৩৬ লাখ টাকায়। হোন্ডার অ্যাকর্ড মেলা উপলক্ষে বিক্রি হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা কমে ৬২ লাখ টাকায়।
মেলায় কাভার্ড ভ্যান প্রদর্শন করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তারা ফোটন নাম দিয়ে এক টন, দেড় টন এবং তিন টন ওজনের তিনটি কাভার্ড ভ্যান প্রদর্শনীতে এনেছে। প্রাণ-আরএফএলের নাম শুনেই অনেকে একটু ঢুঁ মারছে স্টলটিতে।
মেলায় জাপান, কোরিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, ভারত ও বাংলাদেশের অটোমোটিভ, কার, বাইক ও অটো যন্ত্রাংশশিল্পের খ্যাতনামা প্রায় ১৮০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। যেখানে ৩৬০টি স্টল রয়েছে। এখানে রয়েছে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি, মোটর বাইক, বাস, ট্রাক, বাণিজ্যিক পরিবহন, লুব্রিক্যান্ট, সিএনজি রূপান্তরসহ অটো যন্ত্রাংশের সমাহার।