দরিদ্র মানুষের বড় আশ্রয়

বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সেবার পরিধি বাড়ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি-ব্লকে এ প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকেই বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ক্রমান্বয়ে আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি সেখানে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রম দিনে দিনে বাড়ছে। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে চক্ষু-চিকিৎসায় নিবেদিত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সালেহ আহম্মেদের নেতৃত্বে একদল দক্ষ চিকিৎসক কাজ করছেন এ হাসপাতালে। তাঁরা নিয়োজিত রয়েছেন দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবায়। অধ্যাপক ডা. সালেহ আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন এ দেশে উন্নত চক্ষু চিকিৎসা বলতে ছিল সেকেলে ধরনের ছানি অপারেশন। হাত দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে লেন্স বের করতে হতো। ছানি অপারেশনের পর একজন রোগীকে এক মাসের বেশি সময় বেড রেস্টে থাকতে হতো। এখন সেই দিনের অবসান হয়েছে। কেবল ছানি অপারেশন নয়, অনেক ধরনের জটিল অপারেশন হচ্ছে। এক-দুই দিনের মধ্যে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। দেশে চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত হয়েছে। অনেক ভালো ডাক্তার আছেন। বিশ্বমানের প্রযুক্তি এখন দেশেই আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন জোর দিয়েই বলতে পারছি, চক্ষু চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সালেহ আহম্মেদ বলেন, ‘দৃষ্টির সমস্যা নিয়ে দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। তাঁদের হাতের কাছে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ নেই। ঢাকায় এসে কিংবা দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা তাঁদের নেই। ফলে চিকিৎসার অভাবে দৃষ্টিহীন হয়ে বেঁচে থাকেন অনেক মানুষ। আজীবন তাঁদের কাটিয়ে দিতে হয় অন্ধকার পৃথিবীতে। এমন দরিদ্র রোগীদের চোখে আলো ফিরিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তাঁর হাত ধরে আমরা একদল নিবেদিতপ্রাণ চক্ষু-চিকিৎসক দরিদ্র চক্ষু-রোগীদের খুঁজে বের করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছি।’
ডা. সালেহ আহম্মেদ বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের জনবল ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে ভিশন আই ফাউন্ডেশন। হাসপাতালে সবার জন্য চিকিৎসা সুযোগ থাকলেও বিশেষ নজর রয়েছে গরিব মানুষের প্রতি। আমাদের নিজস্ব জাকাত তহবিল থেকে গরিব ও দুস্থ রোগীদের প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অর্থের অভাবে যাঁরা ঢাকায় এসে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না তাঁদের আমরা আমাদের ব্যয়ে ও ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় এনে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছি। পরে আবার তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’ তিনি জানান, এ হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত করা হয়েছে। এখানে এমন কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে, যা বাংলাদেশের আর কোনো হাসপাতালে নেই। এখানে ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাধারণ ও সচ্ছল—সব মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে মাত্র এক শ টাকায় আউটডোর সার্ভিস ও দুই শ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারেন।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা এবং আবাসিক রোগীদের জন্য কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে।
ডা. সালেহ বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাসপাতালের জন্য জমি দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। সেই জমির ওপর ছয়তলা অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরি করে দিয়েছেন, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরো হাসপাতাল গুছিয়ে দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে শুধু নয়, দেশের বাইরেও এমন জনসেবক উদ্যোক্তা বিরল।