অটিজম সচেতনতায় অনন্য উদ্যোগ

‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়…’ নিজের আসন থেকে মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কণ্ঠ ছেড়ে গেয়ে ওঠে ফারহাত। শিল্পী প্রিতম পাশে সরে গিয়ে জায়গা করে দেন তাকে। ফারহাতের দেখাদেখি একে একে আশপাশ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে মঞ্চে উঠে যায় সুপ্ত, পশলাসহ আরো কয়েকটি শিশু-কিশোর।
ফারহাত, সুপ্ত, পশলারা অন্য পাঁচ-দশটি শিশুর চেয়ে বুদ্ধিতে একটু আলাদা। তবু তারা জয় করে নিয়েছে মানুষের মন। এমন ভালোবাসার জোরেই গতকাল শুক্রবার বিকেলে তারা মাতিয়ে তোলে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির লেভেল ৮-এর ক্যাপ্রিকর্ন ওয়ার্ল্ভ্রে অনুষ্ঠিত ‘অটিজম সচেতনতা’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফারেন্টলি অ্যাবলের (পিএফডিএ) যৌথ উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা (কারিগরি) টি আই এম লতিফুল হোসেন, লেখক-শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তাঁর সহধর্মিণী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক, সংগীতশিল্পী প্রিতম আহম্মেদ, পিএফডিএর পক্ষে সাজিদা রহমান ড্যানি প্রমুখ।
টি আই এম লতিফুল হোসেন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বরাবরই সমাজ, দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এই আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি অটিজমের শিকার শিশুদের জন্য তিনি ভবিষ্যতেও বিভিন্ন উদ্যোগে এগিয়ে আসবেন। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে যাতে করে অটিস্টিক শিশুরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ কাজ করে যাবে। ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘সব মানুষ এক রকম হয় না। একেকজন একেক রকম হয়ে থাকে। এর মধ্যে যারা কিছুটা সীমাবদ্ধতার কারণে সমানতালে চলতে পারে না, তাদের আলাদা ভাবা ঠিক নয়। আগে আমরা ভাবতাম বিশেষ শিশুরা হয়তো কিছুই পারে না। কিন্তু এখন আমার সেই ভুল ভেঙে গেছে। কারণ এক ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকলেও তারা অন্য সব ক্ষেত্রে অনেক মেধাবী হয়ে থাকে। এমনকি অনেক স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও কেউ কেউ অনেক বেশি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম। আমরা বিভিন্নভাবে কাজের ক্ষেত্রে এমন প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে করুণা নয়, দয়া নয়, সমান সুযোগ দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে।’
অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘আমরা বিশেষ শিশুদের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। কিন্তু সব সময় হয়তো সুযোগ পাই না। আমাদের এমন শিশুদের জন্য কাজের সুযোগ দেওয়া হলে কিংবা সম্পৃক্ত করলে আমরা অবশ্যই সানন্দে সাড়া দেব, এগিয়ে আসব।’
সংগীতশিল্পী প্রিতম বলেন, ‘আমরা এসব শিশুকে জায়গা করে দিলে তারাও যে নিজেদের যোগ্যতা মেলে ধরতে পারে এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’
সাজিদা রহমান ড্যানি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় আমরা অটিজম বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রমে পথ চলার ক্ষেত্রে অনেক প্রেরণা পেয়েছি। এ সহায়তা আমাদের আগামীর কাজকে ত্বরান্বিত করবে।’ উদ্বোধনী পর্বের পরে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সচেতনতামূলক প্রচারণা। আজও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।